বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘রেমালে’ মোবাইল নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় উদ্বেগ

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘রেমালে’ মোবাইল নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় উদ্বেগ
ছবি: সংগৃহীত
  • স্বজনদের ফোনে না পেয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
  • নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার ধাক্কা ৬২ জেলায়, ৪৫ ভাগ সাইট এখনো অচল।
  • ফেসবুক পোস্ট দিয়ে দায় সারছে অপারেটররা।
  • অপর্যাপ্ত টাওয়ার ও মানহীন সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগ। 
  • বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ভোগান্তি বাড়বে।

শিকদার আসমার বোনের মেয়ে পড়াশোনা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সোমবার ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন ভাগনি সাদিয়ার। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সবাই। নানা মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো উপায় মেলেনি। অবশেষে সোমবার দিবাগত ১২টার দিকে ফোনে কথা বলার সুযোগ হলে সবার মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বরিশাল অঞ্চলে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো বরিশাল। এতে অচল হয়ে পড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক। অনেকে আবার মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়ায় স্বজনদের থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

মঙ্গলবার (২৮ মে) স্বামীর কর্মসূত্রে ফরিদপুরে অবস্থান করা শিকদার আসমা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভাগনির সঙ্গে দুপুর থেকে কথা নেই। ও হলে থাকে। অন্য কারও নম্বরও নেই। রাত পর্যন্ত নানা মাধ্যমে চেষ্টা করেও কথা বলতে পারিনি। সবাই টেনশনে শেষ। রাত ১২টার দিকে ও ফোন করার পর কথা বলতে পেরেছি। না হলে রাতে কারও ঘুম হতো না।’

শুধু শিকদার আসমাই নন, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঘূর্ণিঝড় কবলিত জেলাগুলোর লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে যাদের বাড়ি তাদের এমন সমস্যা বেশি হচ্ছে। যেসব জেলায় ঘূর্ণিঝড় খুব একটা আঘাত করেনি সেখানেও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানা গেছে।

biddut_01


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বারবার চেষ্টা করেও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা থেকেও দূরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তারাও দুশ্চিন্তায় ভোগেন।

এদিকে নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা কাটাতে কাজ করছে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির লোকজন। এমন পরিস্থিতির জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে মোবাইল অপারেটররা।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও কীভাবে স্বাভাবিক করা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারের কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। তবে কখন নাগাদ পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারছে না।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা তিন জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ১৩ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এক হাজার ১২১ স্থানে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি পুরো উপকূলীয় জেলাগুলোতে। ফলে কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ।

ঘূর্ণিঝড় রেমালকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গঠিত মনিটরিং সেল থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় ছাড়া (মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত তথ্যের আলোকে) দেশের বাকি সব জেলায় মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারের সমস্যা রয়েছে।

05

এর আগে সোমবার বিটিআরসি জানায়, ৪৫ জেলায় মোবাইল অপারেটরদের আট হাজার ৪১০টি সাইটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারের মোট সংখ্যা ৫৮ হাজার ২৯৮টি। এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত অচল দেখা গেছে ২৬ হাজার ২৫১টি। সে হিসেবে এখনো অচল রয়েছে ৪৫ ভাগ সাইট।

গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আক্রান্ত দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক টিম ২৪ ঘণ্টা তৎপর আছে যেকোনো সমস্যা মোকাবেলায়। ‍

আর গ্রাহকদের নেটওয়ার্কের সমস্যা নিয়ে করা অভিযোগ সম্পর্কে আরেক অপারেটর এয়ারটেলের ভাষ্য, সাইক্লোন রেমালের প্রভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এয়ারটেল গ্রাহকরা সাময়িকভাবে নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সমস্যাটি সমাধানে আমাদের নেটওয়ার্ক টিম ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া মাত্রই নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

কোন এলাকার নেটওয়ার্ক পরিস্থিতির কী হাল?

সোমবার বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জেলাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মোবাইল অপারেটরদের সাইটগুলো থেকে দুর্যোগকবলিত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

FB_I2

এদিকে ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে বিটিআরসি গঠিত মনিটরিং সেল থেকে কিছু সময় পরপর নেটওয়ার্ক পরিস্থিতির তথ্য উপাত্ত দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সংস্থাটির তথ্য পর‌্যালোচনা করে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় সারাদেশে মোবাইলের টাওয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অচল আছে ঝালকাঠিতে। এই জেলায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত করা হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ৮৪ শতাংশ সাইট অচল রয়েছে। এরপরে আছে পিরোজপুর (৭৩ শতাংশ)।

এর বাইরে ১৪ জেলায় ৭০ থেকে ৭৭ শতাংশ সাইট অচল আছে। ৬০ থেকে ৬৯ শতাংশ সাইট অচল রয়েছে ১০ জেলায়। ৫০ থেকে ৫৯ শতাংশ সাইট অচল আছে ১০ জেলায়। আর ৪০ থেকে ৪৯ শতাংশ সাইট অচল আছে ৯টি জেলায়। ৩০ থেকে ৩৯ শতাংশ সাইট অচল আছে ১০ জেলায়। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে পর্যায়ক্রমে (একটি করে জেলায়) ২৯, ২৩, ১৮, ১২, ৭, ২, ১ শতাংশ সাইট অচল রয়েছে।

তবে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে সব সাইট সচল রয়েছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্রমেই সার্বিক নেটওয়ার্কের অসচল সাইটের পরিমাণ কমছে। অসচল সাইটসমূহের বেশিরভাগই দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে বর্তমানে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃসংযোগ প্রদানের সাথে সাথে সাইটসমূহের সচল হওয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

04

এদিকে দেশের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় চাহিদা বাড়লেও মানহীন সেবায় গ্রাহক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে সক্রিয় সিমধারী গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লাখ। এর বিপরীতে যেখানে লক্ষাধিক টাওয়ার থাকার কথা আছে মাত্র ৪৫ হাজার ২৩১টি।

বিদ্যুৎ চলে গেলে নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেওয়ার অভিযোগ করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপর্যাপ্ত টাওয়ার, মানহীন মাইক্রোওয়েভ, ব্যাটারি, ওভার হেড ফাইবার ও জেনারেটর না থাকায় এমন সমস্যা হচ্ছে।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর