উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাস অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, ফলে জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।
রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে উপকূলীয় বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগীতর বিভিন্ন এলাকায় পায়রা, বিশখালী ও বলেশ্বরের পানি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ টপকিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে যেখা গেছে। এতে আশপাশের মানুষ দিনের বেলায় বসত ঘরে থাকলেও রাত ঘনিয়ে আসতেই আতঙ্কিত হয়ে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বিকেল থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ হিসেবে জেলার ৬৭৩টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নারী পুরুষ ও শিশু প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও পাখিও আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে জেলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন স্থানে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বেতাগী উপজেলায় সড়কে বড় বড় গাছ পড়ে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় প্রশাসন, মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিস ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন কর্মীরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মাহতাব হোসেন বলেন, পূর্বের তুলনায় আজকের উপকূলীয় এলাকায় নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা ৯ থেকে ১০ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
জাহিদুল ইসলাম নামের একজন জানান, পাথরঘাটার বাইন চটকি এলাকার ফেরিঘাট সংলগ্ন সড়কে দিনের বেলা উপচে পানি গড়াগড়ি করছে। তবে গভীর রাতে পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখানকার মানুষের ভয় কাজ করছে।
পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকার শাজাহান সিকদার বলেন, কোনো ঘূর্ণিঝড় আসলেই সেই ২০০৭ সালের সিডরের কথা মনে পরে যায় বারবার! তাই আগে থেকেই পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
বরগুনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সদরের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানি তেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনসহ আমাদের লোকজন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে মানুষদেরকে আছড়ায় কেন্দ্রীয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মাইকিং করে প্রত্যেকটি এলাকায় এলাকায় সিপিপি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো সকলকে মানুষকে আশ্রয়স্থলে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহা. রফিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে জেলার ছয়টি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বরগুনায় ৩টি মুজিব কেল্লা, ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবেন। এছাড়াও ৪২২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, ৩৭ লাখ নগদ অর্থ প্রস্তুত রয়েছে।
বরগুনার ডিসি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৪২টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিনিধি/এএস