শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

২২তম সম্মেলনে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

২২তম সম্মেলনে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ

রাত পোহালেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে দলটির ত্রিবার্ষিক এই সম্মেলন। ইতোমধ্যে সম্মেলনের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। আর এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।

এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে তাদের বেশির ভাগ ঢাকায় চলে এসেছেন। তারা বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে উঠেছেন। এ কারণে রাজধানীর কোনো হোটেলেই সিট খালি নেই।


বিজ্ঞাপন


Awami League Conferenceশনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসনগ্রহণ করবেন। এরপর আধাঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। পরে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করবেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সবশেষ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।

পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। এ লক্ষ্যে দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্যসচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ করেছেন।

Awami League Conferenceসম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে জানিয়ে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও নেতাকর্মী কমবে না। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এবারের সম্মেলন সাদামাটাভাবে করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মূল মঞ্চের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা মঞ্চ। আর মূল মঞ্চে চার সারিতে চেয়ার সাজানো হবে। এরমধ্যে প্রথম সারিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। এছাড়া দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বাকি দুটিতে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্যসচিব ও দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চের উচ্চতা ৭ ফুট। মূল মঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।

Awami League Conferenceএদিকে, আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার ২২তম সম্মেলনে যুক্ত হয়েছে ‘থিম সং’। প্রথমবারের মতো এই মুক্তিবোধ আর প্রগতিবাদী রাজনীতির মূলস্বরকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে ‘থিম সং’। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে থিম সংটি আপলোড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর বিভাগের উদ্যোগে নবনির্মিত এই ‘থিম সং’ যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের গীতিকাব্যে দলের ৭৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সৃষ্ট দলের থিম সংয়ে সুর তুলেছেন দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পরিকল্পনায় গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন পাভেল আরিন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করে ইতোমধ্যেই বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে স্পষ্ট করেছেন, সভাপতি পদে পরিবর্তন আসছে না। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সভাপতি থাকছেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি চূড়ান্ত। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিও থাকছে ৮১ সদস্যের। সেখানেও বড় ধরণের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, ‘এবারের যে সম্মেলন, যে কমিটি হবে এখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব কম। আমরা পরবর্তী সম্মেলন নির্বাচনের পর সে রকম চিন্তাভাবনা আছে। আপাতত আমরা বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ব্যাপারে ভাবছি না।’

Awami League Conferenceআবার পদ পরিবর্তনের বিষয়ে ‘কাউন্সিলরদের অভিমত’কেও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে আলোচনার বড় একটি জায়গা তৈরি হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন, যেহেতু ‘সম্মেলন যে কমিটি হবে এখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব কম’, সেহেতু হয়তো ওবায়দুল কাদেরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে চলেছেন।

২০১৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। ওই বছর ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর ২০১৯ সালে ২১তম সম্মেলনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। আলোচনা রয়েছে- এবারও পুনর্নির্বাচিত হতে চলেছেন তিনি। তবে দলের মধ্যেই অনেকেই সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন প্রত্যাশী। তাদের মতে, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন প্রয়োজন।

আবার ওবায়দুল কাদেরর এই পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ দেখছেন অনেকেই। এই সম্ভাবনার পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এদিকে, গত কয়েক মাস ধরে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় ছিলেন অন্তত ১০জন। গত বৃহস্পতিবার নিজ মুখে ওবায়দুল কাদেরও তা জানিয়েছেন।

তবে শেষ মুহূর্তে আলোচনা থেকে ছিটকে গেছেন অনেকেই। সম্মেলনের আগের রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা- শেষমেষ যদি ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল না থাকেন, তাহলে তার জায়গায় আসতে পারেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। আবার একই পদ থেকে জোড় আলোচনায় রয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

Awami League Conferenceসাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও অন্যান্য পদের বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। শোনা যাচ্ছে- এবারে কমিটিতে আমূল পরিবর্তন না আসলেও পদোন্নতি পেতে পারেন কয়েকজন। এরমধ্যে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও ড. দীপু মনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।

এছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পদন্নোতির আলোচনায় রয়েছেন– এস এম কামাল হোসেন ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ পদন্নোতি পেয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, এবারের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দুঃসংবাদও আসতে পারে কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদকদের জন্য। কম সক্রিয় তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবার তাদের পদ হারাতে পারেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে। আবার কিছু পরিবর্তনও আসতে পারে সদস্য পদে। পদন্নোতি পাওয়ার পাশাপাশি পদও হারাতে পারেন কয়েকজন নেতা।

Awami League Conferenceতবে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট মন্তব্য করতে রাজী নন কোনো নেতারাই। তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অভিভাবক। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফলে শনিবারের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের দিকে তাকিয়ে কেন্দ্রীয়সহ তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীরা।

এদিকে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজনের জন্য এ বছর বিদেশিদের দাওয়াত করা হচ্ছে না। তবে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে দাওয়াত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা একদিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল তিন কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি।

অন্যদিকে, এই সম্মেলনকে ঘিরে শনিবার যান চলাচলের ক্ষেত্রে বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের ১১টি পয়েন্টে সড়ক দিয়ে প্রবেশ বন্ধ ছাড়াও ডাইভারশন পয়েন্টের বিস্তারিত জানানো হয়েছে রমনা ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। তাতে কোন কোন সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে এবং কোন কোন সড়ক বন্ধ থাকবে সে সম্পর্কে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সম্মেলনে আসা ব্যক্তিদের গাড়ি কোথায় কোথায় পার্কিং করতে হবে তাও বলা হয়েছে।

কারই/জেবি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর