মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিউমার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসলেও ঝুঁকিতে আশপাশের মার্কেট

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৩, ১০:৩৮ এএম

শেয়ার করুন:

নিউমার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসলেও ঝুঁকিতে আশপাশের মার্কেট

পরিকল্পিতভাবে নকশা স্থাপন করে রাজধানীর নিউমার্কেটে বসানো হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। এর মধ্যদিয়ে এ মার্কেটের অগ্নিঝুঁকি অনেকটাই কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ী সমিতির। যদিও নিউমার্কেটের তুলনায় আশপাশের মার্কেটগুলো অনেক বেশি ঘিঞ্জি। ফলে চরম অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে এসব মার্কেট এবং এর যেকোনো একটিতে আগুন লাগলে আশপাশের মার্কেটগুলোতে সহজেই তা ছড়িয়ে পড়বে।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন জানান, নিউমার্কেটে ৭৬টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) স্থাপন করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে ব্যবহার নিশ্চিতে ম্যাপও করা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরী, মার্কেট পর্যবেক্ষকসহ অন্যদের আগুন নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি মুহূর্তে সাড়া প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, মার্কেটগুলোতে অধিক দোকান বসানোর প্রবণতা আগুন লাগার একটি কারণ। যা বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে অন্য অনেক সেবা নিশ্চিতে পিছিয়ে থাকে, যেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আমাদের মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে। এছাড়া সস্তায় যন্ত্রাংশ কেনার প্রবণতা রয়েছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও থাকে না।

নিউমার্কেট ও এর আশপাশের এলাকা প্রশাসনিকভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন। মার্কেটগুলোর ঝুঁকি নিয়ে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, মার্কেটগুলোতে অব্যবস্থাপনা রয়েছে। দোকানগুলোর সামনে আরও তিনটি দোকান বসানো হচ্ছে। তারা সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিচ্ছে। সাথে প্রতিটি দোকানের জন্য গুদাম রাখছে। সব মিলিয়ে একটা অপরিকল্পিত ব্যবস্থা।

new2

সরেজমিনে নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, নিউমার্কেটের পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ দিকের প্রধান চারটি ফটক, মসজিদ, জেনারেটর কক্ষ, সাবস্টেশন ও ভেতরের মার্কেটের অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। ফায়ার এক্সটিংগুইশার সহজেই যেন পাওয়া যায় সে জন্য ম্যাপ ফুটপাতের (দোকানের সামনের) দোকনিদের দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


অবশ্য নিউমার্কেট ঘুরে বেশকিছু অসঙ্গতিও দেখা যায়। এরমধ্যে প্রতিটি মূল দোকানের সামনে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ২টি করে দোকান। কোথাও কোথাও তিনটি দোকানও রয়েছে। মূল মার্কেটের ভেতরে এবং প্রবেশ গেটের অংশ দখলে নিয়েছে খাবারের দোকান থেকে শুরু করে অস্থায়ী হকাররা। মার্কেটটির শহীদ মিনার ঘিরে চলছে রমরমা হকার বাণিজ্য। ময়লা ফেলা হচ্ছে শহীদ মিনারে।

অন্যদিকে নিউমার্কেট লাগোয়া নিউ সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ভবন, বনলতা মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোর প্রতিটি ফ্লোরে বসানো হয়েছে অপরিকল্পিত দোকান। নিরাপত্তার বালাই নেই। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই কারও কাছে। দোকানের নির্ধারিত অংশ ছাড়িয়ে প্রতিটি দোকানের সামনের দুই ফুট জায়গা দখল করা হয়েছে। দুই পাশের চার ফুট জায়গা দখল হওয়ায় হাঁটার জায়গাটুকু সংকীর্ণ গলিতে পরিণত হয়েছে। একত্রে তিনজন মানুষ হেঁটে যাওয়া যায় না। দিনভর লেগে থাকে জট।

উপরে উঠতেই দেখা যায়, জিন্স দোকানগুলো আরও এক ধাপ এগিয়ে। বড় গলিগুলোকে ছোট করতে করতে এখন আর দুজন একত্রে হাঁটারও উপায় নেই। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পাঁয়ে হেঁটে বের হওয়ারও উপায় থাকবে না।

এছাড়া এই এলাকার গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনি চক, নূর ম্যানশন, বাকুশাহ মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, গ্লোব শপিং, বদরুদ্দোজা মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, গাউসুল আযম মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, রাইফেল স্কয়ার, এআরএ শপিং সেন্টার, অরচার্ড পয়েন্ট, ক্যাপিটাল মার্কেট, ধানমন্ডি প্লাজা, মমতাজ প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, প্লাজা এআর, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজা, অর্কিড প্লাজা, কেয়ারি প্লাজা, আনাম র‌্যাংগস প্লাজা, কারওয়ান বাজার ডিআইটি মার্কেট ও কিচেন মার্কেটগুলোরও ব্যবস্থাপনা নাজুক।

new3

এ নিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় ক্রেতাদের। নিউ সুপার মার্কেটে মার্কেটে এসেছেন মেহেদী হাসান, সঙ্গে স্ত্রী আঞ্জুমানআরা ও দেড় বছরের সন্তান। আলাপকালে আঞ্জুমানআরা বলেন, একটা ইনডাকশন চুলা ও ননস্টিক ফ্রাইপ্যান কিনতে এসেছি। নিজেদের হাঁটাই দায়। বাচ্ছাকে নিয়ে তো হাঁটাই যায় না। এক পর্যায়ে মেহেদী হাসান বলেন, এ মার্কেটটি কিন্তু অতটা অপরিকল্পিত না। মার্কেটের ব্যবস্থাপনা অপরিকল্পিত। দোকান যত বড়, মালামাল তুলেছে তার দশগুণ। হাঁটার পথ দখল করে মালামাল রাখা হয়েছে। কষ্ট করে মাঝপথ পর্যন্ত আসা যায় কিন্তু কোনো প্রকার জরুরি অবস্থায় কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে বের হওয়া যাবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। ঝুঁকি আছে জেনেও আসছি, কারণ উপায় নেই।

এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ঝুঁকি থাকার পরও মার্কেট মালিক কিংবা দোকানিদের সহযোগিতার মানসিকতা থাকে না বা আমরা তাদের পাশে পাই না। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটগুলো শনাক্তে জরিপ প্রয়োজন। একটা জরিপ করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। তাই আমরা চিন্তা করছি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে জরিপ করার।

এদিকে সামনের দিনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় অতি গুরুত্ব দিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হবে। এ জন্য ১১ সদস্যর কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে, যে দলে শিক্ষার্থী, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা থাকবে। তাদের বয়সসীমা ১৬-৩০ বছর হবে। এ দলে বাসা-বাড়ির কেয়ারটেকাদেরও (দারোয়ান) রাখা হবে। তাদের বয়সসীমা শিথিল করা হবে। কারণ, দুর্যোগে তাদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হয়। ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম থাকবে।

ডিএইচডি/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর