রাজধানীর ঢাকার নিউ মার্কেট। ৫০ ও ৬০’র দশকেও এই স্থানটি কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বিগত তিন বছর থেকেই ঈদ আসলেই ওই নিউ মার্কেট এলাকায় কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। ২০২০-২০২১ সালে করোনা, ২০২২ সালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর প্রভাব ঈদ বাজারেও পড়েছিল। কিন্তু চলতি বছরই ঈদ বাজার শুরু হওয়ার পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতেও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের বাজারে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনায় সরগরম থাকে নিউমার্কেট ও এর আশপাশের অর্ধশত মার্কেট। ছুটির দিন শনিবার (১৫ এপ্রিল) ক্রেতাদের ঢল আর বেচাকেনায় ধুম পড়ার কথা ছিল মার্কেটগুলোতে। শুক্রবারের বিকিকিনি শেষে দোকানিরাও সেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু নিউমার্কেট লাগোয়া ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়ে আশপাশের ওই প্রায় অর্ধশত মার্কেটে। পরিস্থিতি বিবেচনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিউমার্কেটসহ আশপাশের কয়েকটি মার্কেট। আর এতেই বারবার ঈদের সময় বিক্রিতে ভাটা পড়ার আক্ষেপে পুড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছরই রোজার ঈদ ঘিরে তাদের অন্যরকম প্রত্যাশা থাকে। রোজার মাসে, বিশেষ করে শেষ দুই সপ্তাহ এই প্রত্যাশা থাকে কয়েক গুন বেশি। এই সময়ে বিক্রিও হয় অনেক বেশি। কিন্তু গত কয়েক ঈদে একেক ধরনের বিপর্যয় সামনে আসায় বিক্রিতে ভাটা পড়ছে। ২০২০ সালে করোনার থাবায় সব মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালেও করোনায় কারণে তেমন বেচাবিকি হয়নি। গত বছর (২০২২ সালে) ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তুমুল সংঘর্ষে থমকে যায় বেচা-কেনা। আর এবার আগুন সবকিছু থমকে দিয়েছে। এই সময়ে দুদিন ব্যবসা করতে না পারলে লাভ উঠানো কষ্টকর জানিয়ে নিজেদের কপালকে দুষছেন তারা।

সরজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেটসহ আশপাশের অর্ধশত মার্কেটে রয়েছে হাজার হাজার দোকান। আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটের ঠিক উত্তরে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, দক্ষিণে লাগোয়া মূল নিউ মার্কেট। পশ্চিমে লাগোয়া কাঁচা বাজার মার্কেট। এছাড়া বিপরীতে মিরপুর রোডের পূর্ব দিকে রয়েছে গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নূর ম্যানশনসহ কয়েকটি মার্কেট। সড়কের পূর্ব পাশে উত্তর দিকে রয়েছে আধা পাকা ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের উত্তর দিকে গ্লোব শপিং মল, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, ইয়াকুব সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেট, গোল্ডেন সুপার মার্কেট, নেহার ভবন শপিং সেন্টার, প্রিয়াঙ্গন মার্কেট। গতকাল দুপুর থেকে কয়েকটি মার্কেটের কিছু কিছু দোকান খুললেও প্রায় সব দোকানই বন্ধ ছিল। পাশাপাশি রাস্তা বন্ধ থাকায় ক্রেতা ছিল না বললেই চলে।
আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটের ৩য় তলার ব্লক লাইনের সিটি ব্লক দোকানের মালিক মাহমুদ হোসেন বলেন, ঈদের আগে শেষ কয়দিনের বেচা-বিক্রির জন্য ২১ হাজার পিস মাল উঠাইছি। সব শেষ। ৪ জন কর্মচারী আছে। ওদের বেতন বোনাস কোথা থেকে দেব জানি না।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেট লাগোয়া চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের নিচতলার নিবেদান গার্মেন্টস দোকানের মালিক হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের এই মার্কেটে বেচাকেনা খুবই কম। আমরা ঈদ আসার অপেক্ষায় থাকি। যাতে সারাবছর টুকটাক যে ধারদেনা করতে হয়, সেগুলো মোটামুটি পরিশোধের পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে, ঈদ আসলেই কোনো না কোনো বিপর্যয় সামনে আসে। করোনার কারণে দুবছর ব্যবসায় ঢাল গেছে। মাসের পর মাস লস টানতে হইছে। গত বছর ঈদের আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে ৪ দিন থমকে ছিল বিকিকিনি। তখন পরিস্থিতি থমথমে হওয়ায় অনেকেই আমাদের এখানকার মার্কেট এড়িয়ে গেছেন। ফলে গতবার আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। এবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতেছিলাম। বিক্রিও গত কয়েকদিনে খুব ভালো হয়েছে। এরইমধ্যে আগুনের থাবা।
হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, আসলে সবই আমাদের কপালের দোষ। না হলে, একটার পর একটা বিপর্যয় আসবে কেন? আর এসব বলেও কোনো লাভ নাই। কেউ তো আর আমাদের সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ দিতে আসবে না।

এদিকে, রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের প্রায় অর্ধশত মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, আগুন লাগার পর সব রাস্তা বন্ধ রয়েছে। ক্রেতা না আসায় মার্কেট বন্ধ রেখেছেন তারা।
এর আগে শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ মার্কেটের পাশে নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। একে একে মোট ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভেনি।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে ফায়ার সার্ভিস পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ধোঁয়ার অস্তিত্ব থাকা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপন কার্যক্রম চলবে। হঠাৎ ধোঁয়া দেখা মাত্রই আমরা পানি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। মাঝে মধ্যেই এমন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নিউ মার্কেটের ফায়ার সেফটি সিস্টেম দূর্বল ছিল। তাই কাজ করতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়াও দোকানের ডেকোরেশন ও ফলস ছাদের জন্য আগুন নেভাতে কষ্টসাধ্য হচ্ছে।
কেআর/এএস




































































