মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তিন বন্ধুর স্বপ্নের সমাধি

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

তিন বন্ধুর স্বপ্নের সমাধি

দশ বছর আগে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিন বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই ব্যবসা বাড়লে তারা দোকান নেন। কয়েক শ টাকার ব্যবসা বেড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হয়েছিল। এবার ঈদকে কেন্দ্র করে ১৫ লাখ টাকার টি-শার্ট কিনেছিলেন। সবগুলো বিক্রি করতে পারলে ভালো লাভ হতো। কিন্তু সেই মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন তারা শূন্য পুঁজিতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ীদের মিছিলের তিনজন।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা কলেজের মেইন গেটের সড়কে ফুটপাতের আইল্যান্ডে আনাস ও সাদ্দাম ইসলাম তিন বন্ধুর স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন। 


বিজ্ঞাপন


আনাসের মতে, তাদের তিন বন্ধুর স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। এই ব্যবসা থেকে তাদের সংসারের অনেকটা সাপোর্ট হতো। তিনি পাশাপাশি আইন পেশায় থেকে প্রাকটিস চালান। এখনো তেমন গ্রাহক ধরা শুরু করেননি। তবে এক আইনজীবীর সাথে থেকে কাজ করেন।

সকাল সোয়া সাতটায় আগুন লাগার খবর শুনে ছুটে আসেন নিউ মার্কেট এলাকায়। এরপর দেখতে পান, নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে। কিছুই করার ছিল না তার। শুধু আক্ষেপ করে ঠোঁটের কোনায় কষ্টের হাসিতে বললেন, কপাল খারাপ হলে যা হয়। রাতে আমাদের ম্যানেজার ছিল। দোকানদারী করে তারা রাত তিনটায় ঘুমাতে গেছে। এর ফাঁকে ভোর সাড়ে ৫টায় আগুনের ঘটনা। অনেকে কিছু কাপড় সরাতে পারলেও আমরা কিছুই নিতে পারিনি। মিরপুর থেকে আসতে আসতে সব পুড়ে গেছে। 

আনাসের সাথে ফুটপাতের আইল্যান্ডে বসে আছেন তাদের ম্যানেজার মাসুদ রানা। 

তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, রাতেও ছিলাম। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধান। সাড়ে ৫টায় কেবল খেয়ে ঘুমাতে যাব। রেস্ট নিচ্ছিলাম কিন্তু ঘুমাইনি। ঠিক ৬টায় দেখি আগুনের খবর টিভিতে। বিশ্বাস করতে পারছি না আমরা মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে শূন্য হাতের ব্যবসায়ী হয়ে গেলাম। 


বিজ্ঞাপন


fire

তারা জানান, নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্লু স্কাই টি শার্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ২৯৯ নম্বর দোকানটি ছিল তাদের। গতকাল ব্যবসা করে ক্যাশে ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ রেখে দোকান বন্ধ করেন। এরপর মালিক ও ম্যানেজার যে যার মতো বাসায় গিয়ে সেহরি করছিলেন। ঘণ্টা দুই পরে তারা আগুনের খবর পান।

হিরু ও সুফিয়ানের কোটি টাকা পুড়ে নিঃস্ব তারা

হিরু ও সুফিয়ান যৌথ ব্যবসা করতেন। তাদের দোকানে আজ ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কোটি টাকার মাল ছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সেই মাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

সুফিয়ানের দাবি, তাদের তিনটি দোকানে এক কোটি টাকার বেশি মালমাল ছিল। যা তারা সম্প্রতি তুলেছিলেন। তারা মার্কেটটির দুইতলায় ব্যবসা করতেন। ভোরে ব্যবসাপাতি করে ঘুমাতে গেছেন। সকাল ৮টায় ঘুম থেকে ওঠে শুনতে পান, নিউ মার্কেটে আগুন লেগেছে। এরপর ছুটে আসেন। 

দুপুর ১২টায় তার সাথে যখন চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে কথা হচ্ছিল তখন হিরু ও সুফিয়ান দোকান থেকে উদ্ধারকৃত কিছু মাল নিয়ে সিঁড়িতে বসে কথা বলছেন।

fire

এই দুই বন্ধুর আফসোস তারা সঠিক সময়ে আসলে হয়ত আরও কিছু মাল বের করতে পারতেন। কিন্তু তাদের কপালটাই খারাপ বললেন হিরু। 

দুই বন্ধু প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে কোটি টাকায় তিনটি দোকান খুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আগুন এখন তাদের পথে বসিয়ে দিল!  

হিরু জানান, তারা সম্প্রতি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে, ধারদেনা করে এবং মহাজনকে ম্যানেজ করে কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন। ব্র্যাক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে তাদের ব্যাংক ঋণই রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। 

তারা জানালেন, মার্কেটটিতে প্রায় ছোট বড় ১২০০ ব্যবসায়ী ছিল। যাদের বেশির ভাগেরই দোকান পুড়েছে। ফলে ঈদের আগে তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেল। সবচেয়ে বড় ক্ষতি অনেকের পুঁজিও পুড়ে গেছে।

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর