শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ল ১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ল ১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা

২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে এ প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে রাখা রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ছে ১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।

এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, মানসম্মত ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে, কোভিডকালীন স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট হতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সংগ্রহ ও তার ব্যবস্থাপনা, দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন ক্রয় ও প্রয়োগ করেছি। জনগণকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রদানে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম ৫ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। কোভিড পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ কোভিড-১৯ এর পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে “National Preparedness and Response Plan ( NPRP) for COVID- 2019” সংশোধন করে আমরা ‘Bangladesh Preparedness and Response Plan (BPRP)’ তৈরি করেছি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১৬টি জাতীয় গাইডলাইন, অন্যান্য ২৯টি নির্দেশিকা, ৪টি এসওপি (Standard Operating Procedure) এবং ১৩টি গণসচেতনতামূলক উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলিতে ১২ হাজার ৮৬০টি শয্যা এবং ১ হাজার ১৮৬টি আইসিইউ’র সংস্থান করা হয়েছে। দেশের সকল জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে কমপক্ষে ৫টি শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকের দিকটি সামনে এনে মন্ত্রী বলেন,  গ্রামীণ জনগণের কাছে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কার্যকর মাধ্যম হিসেবে আমরা এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়। ক্লিনিকের জন্য জমি প্রদানের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায়ও ভূমিকা রাখেন। ক্লিনিক পরিচালনা ও ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব সরকারের। ক্লিনিকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা ছাড়াও পুষ্টিসেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া, ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অনুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা পয়সায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ জন সেবাপ্রার্থী সেবা গ্রহণ করে থাকেন, যার ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবসেবা দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যখাতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসাণের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাধারণ জনগণের জন্য উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা হতে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, ৬টি জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩ হতে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৪১৪টি শয্যা বৃদ্ধি করে ১ হাজার ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনী ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজী ঢাকার শয্যা সংখ্যা ২০০ হতে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০০ শয্যা বৃদ্ধিপূর্বক ৪০০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শহিদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিরাজগঞ্জ-এ সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও চিকিৎসাসেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্কিন ব্যাংক এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ও একটি লিম্ব সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সেবা সহজীকরণসহ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে দক্ষ ধাত্রী ও মিডওয়াইফ-এর মাধ্যমে নিরাপদ প্রসবসেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রশিক্ষণ ও সেবা গ্রহীতাদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫০০টি এফডব্লিউসি (Family Welfare Center)-কে মডেল এফডব্লিউসি ঘোষণা করা হয়েছে। কৈশোরকালীন জন্মহারকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্দেশে ২০১৭-২০৩০ সাল মেয়াদের জন্য একটি জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র অনুমোদিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রে স্থাপিত ১ হাজার ১০৩টি কৈশোরবান্ধব কর্নার এর মাধ্যমে জনগণকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আগামীতে আমরা প্রতিবছর ২০০টি করে কৈশোরবান্ধব কর্নার স্থাপন করব। এছাড়া, ৫৯২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ এবং জেলাশহরে বিদ্যমান মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রকে মা ও শিশু হাসপাতালে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ সকল হাসপাতালের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হবে।


বিজ্ঞাপন


ডিএইচডি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর