বাজেট প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, আগে পার্লামেন্টারি মেম্বারদের নিয়ে একটি প্রাক বাজেট আলোচনা করা হত, এখন আর তেমন করা হয় না। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রী তার বিবেচনা অনুযায়ী তা পাস করেন। তারপর সংসদে 'হ্যাঁ/না' ভোটের দ্বারা বাজেট পাস করা হয়। কিন্তু সংসদ সদস্যদের 'হ্যাঁ/না' এর মধ্যে না রেখে বাজেটের সাথে সম্পৃক্ত করলে আরও ভালো হতো।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারত্ব, বাজেট ভাবনা এবং বাজেট মনিটরিং’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। বাজেট নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)। এতে সহযোগিতা করে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি)।
রাশেদ খান মেনন বলেন, বাজেট নিয়ে সংসদে যে আলোচনা হয় তাতে বাজেটবিষয়ক কথাবার্তা থাকে অল্প, এক ঘণ্টার মধ্যে হয়তো তিন-চার মিনিট। অন্য কথাই থাকে বেশি। এবার তো আসন্ন ঈদুল আজহার কারণে অধিবেশনের সময় আরও সংক্ষিপ্ত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ করে কীভাবে বাজেট প্রণয়ন করা যায়, মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটিই হয়তো এবার বিবেচ্য হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গ্রামীণ নারী, আদিবাসীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন অবহেলিত কমিউনিটিকে চিহ্নিত করে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে বাজেটে যাতে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এইচডিআরসির প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত। তিনি বলেন, দেশে সম্পদ, আয়, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ, আবাসনসহ সব ক্ষেত্রেই বৈষম্য ক্রমে বাড়ছে। মজুরি বৃদ্ধির হারের তুলনায় মুনাফা প্রাপ্তির হার বাড়ছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য বাড়ছে। আগে যারা দরিদ্র ছিলেন না এমন এক নতুন দরিদ্র গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। গত ২-৩ বছরে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ‘নতুন দরিদ্র’ হয়েছেন। ফুলেফেঁপে উঠছে দুর্বৃত্ত-লুটেরা পরজীবীরা। এসবই এখন নতুন প্রবণতা।
তিনি বলেন, যেসব মাথাপিছু গড় হিসাব দেওয়া হয় তা সত্যকে আড়াল করে। প্রবৃদ্ধিসংক্রান্ত মাপকাঠিগুলো গভীর কোনো কিছু নির্দেশ করে না। এগুলো কেবল কথার মারপ্যাঁচ। অযৌক্তিক কথাবার্তা।
কালোটাকা প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, তিনি হিসাব করে দেখেছেন, গত ৫০ বছরে দেশে পুঞ্জীভূত কালোটাকার পরিমাণ ১২২ লাখ কোটি টাকা। এই বিপুল কালোটাকার মাত্র ২ শতাংশ যদি উদ্ধার করা হয়, তার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় সাধারণ মানুষের সর্বজনীন পেনশনের টাকার প্রিমিয়ামের জোগান হয়ে যাবে।
এছাড়া সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কমিয়ে সম্পদের ওপর কর আরোপ ও আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেন আবুল বারকাত।
পরে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শফিক-উজ-জামান। তিনি বলেন, মানুষের মাথাপিছু আয় এবং বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্য বাড়লে শিল্পের সুষম বিকাশ সম্ভব নয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন এএলআরডির চেয়ারপারসন ও ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির। আলোচনায় আরও অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপমা দেওয়ান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের অংশীজন চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সুনামগঞ্জের বেসরকারি সংস্থা হাউস-এর নির্বাহী পরিচালক সালেহীন শুভ এবং রাজশাহীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রুলফাও-এর পরিচালক আফজাল হোসেন।
এমএইচটি