শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কৃষি খাতে ১৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৩, ০৪:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

কৃষি খাতে ১৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এই প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী।


বিজ্ঞাপন


বাজেট বক্তৃতায় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সকল কৃষককে স্মার্ট কার্ড প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ভর্তুকির পাশাপাশি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি খাতে অবদানের জন্য সরকার কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ‘এআইপি’ সম্মাননা পদকের প্রবর্তন করেছেন এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এ পদক দেওয়া হয়েছে।

কৃষি খাত উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে কোভিড-১৯ ও চলমান বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। কৃষিবান্ধব নীতির প্রভাবে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ ও ছাগলের মাংস উৎপাদনে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ এবং সেচ সুবিধা প্রদান করছি। কৃষকদের নিকট সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনমত সার সরবরাহের জন্য সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ হারে রেয়াত প্রদান করা হচ্ছে। আমরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করেছি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তায় ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা ব্যবহার করে একসাথে ধানের চারা তৈরি, রোপন ও কর্তনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি (Synchronized Cultivation) প্রবর্তন করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে দীর্ঘ জীবনকালীন ধানের পরিবর্তে স্বল্প জীবনকালীন ধান আবাদের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন ধান বেশি উৎপাদিত হবে।


বিজ্ঞাপন


পতিত জমি আবাদ ও কৃষিপণ্য বহুমুখীকরণ নিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। তাঁর নির্দেশনামত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে পতিত ও অব্যবহৃত জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ভোজ্যতেলের আমদানি হ্রাস, আলু রফতানি বৃদ্ধি, কাজুবাদাম, কফিসহ রফতানিমুখী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আম, পেয়ারা, কুল, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন উদ্যানভিত্তিক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি করে মোট ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪০০টি পারিবারিক সবজি বাগান স্থাপনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৬টি বাগান স্থাপিত হয়েছে।

প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সহায়তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সকল কৃষককে স্মার্ট কার্ড প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ভর্তুকির পাশপাশি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা 'কৃষিখাত উন্নয়নে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ২০২২' প্রণয়ন করেছি। আমরা লবণাক্ততাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু ধানের চাষ করছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূপ্রকৃতিগত বিভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। উৎপাদন নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য এখন ভার্টিকাল পদ্ধতিতেও চাষাবাদ করা হচ্ছে। ভাসমান কৃষি, ছাদ কৃষি, হাইড্রোপনিক ও অ্যারোপনিক কৃষি, সমুদ্র সম্ভাবনা ও প্রিসিশন কৃষি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো- উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বিদ্যমান ২১.৮ লক্ষ মেট্রিকটন হতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৭ লক্ষ মেট্রিকটনে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সারাদেশে পুরাতন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরী স্থাপন এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। দরিদ্র, অনগ্রসর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীর নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ৫৫টি উপজেলায় ৩ লক্ষ পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা তদারকির কাজ জোরদার করার জন্য আমরা ৬৪টি জেলায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিস স্থাপন করেছি এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে খাদ্যের মজুদ, সংরক্ষণ, ও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয় ও সম্প্রসারিত সামুদ্রিক জলাশয়ের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।

এর আগে বিকেল তিনটায় অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত আছেন। এবার মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট।

ডব্লিউএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর