আসছে বাজেট। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট এটি। এটাকে নির্বাচনি বাজেটও বলছেন অনেকেই। কেমন হতে যাচ্ছে আসন্ন সেই বাজেট সেটি নিয়ে অনেকেই নানা হিসাব কষছেন। কেননা, করোনা মহামারির বিশাল ধাক্কা কাটিয়ে উঠার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবার নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলেছে গোটা বিশ্বকেই। বাংলাদেশেও এর প্রভাব রয়েছে।
করোনায় অনেকেই কাজ হারিয়ে নতুন করে কাজ খুঁজে পাওয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। আর জনগণের বেড়েছে দীর্ঘশ্বাস। বাজারে গেলে অনেকের আয়ের সাথে এখন ব্যয়ের হিসেব মেলে না। সেই সাথে নতুন বাজেটে সরকার কর আদায়ে কঠোর হবেন বলেও জানা গেছে। আসন্ন বাজেটে সেই হিসেব কতটুকু মিলবে সেটির হিসাব কষছেন অনেকে।
বিজ্ঞাপন
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবার (০১ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নির্বাচনের বছর হওয়ার পরও নতুন বাজেটে কর আদায়ে কঠোর হচ্ছে সরকার। বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। টানা পঞ্চমবারের মতো বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এর আগে গত ১০ বছর টানা বাজেট দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটের যে আকার ধরা হচ্ছে তার এ খরচ মেটাতে বিভিন্ন খাতে বাড়তি কর বসিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীর, যা বাস্তবায়ন করতে অন্তত ৩৬ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হতে হবে। অথচ চলতি অর্থবছরেই ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যপূরণে হিমশিম খাচ্ছে এনবিআর। রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ১০ শতাংশের ওপরে তোলা যাচ্ছে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন খাতে কর আদায়ে এমনভাবে পরিকল্পনা নিচ্ছেন যার রেশ পড়বে ভোক্তার ঘাড়েই। আয় না থাকলেও দিতে হবে ন্যূনতম আয়কর, সেটাও দিতে দেরি করলে জরিমানা হবে দ্বিগুণ। জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রিতে দ্বিগুণ হারে গেইন ট্যাক্স দেওয়ার বিধান আসছে। মোবাইল ফোনসেট কিনলে যেমন বেশি খরচ করতে হবে, তেমনি বিদেশ থেকে আনা ফ্রিজ, ফ্যান, এলপিজি সিলিন্ডারেও গুনতে হবে অতিরিক্ত শুল্ক। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে কমবে করছাড়, একের বেশি গাড়ির মালিক হলে কার্বন কর দিতে হবে। প্লাস্টিকের বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যে খরচ বাড়তে পারে, ব্যয়বহুল হবে নির্মাণসামগ্রীও। কারণ, ইট, রড, সিমেন্টেও ভ্যাটের হার বাড়ছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, কর আদায়ে এমন আরও অনেক বিধান আসছে নতুন অর্থবছরে। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যতই কৌশল করা হোক না কেন, বেলা শেষে বাড়তি এই করের বোঝা পড়বে সাধারণ ভোক্তার ঘাড়েই।
বিজ্ঞাপন
গবেষণা সংস্থা পিআরআই বলছে, অর্থবছর শেষে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। তারপরও নতুন লক্ষ্যমাত্রায় স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ধরে আরও অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায়ের প্রস্তাব থাকবে বাজেটে। আর এত বিরাট রাজস্ব আয়ের জন্যই এনবিআরের বাড়তি করের ছক। এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, আসলে আয়কর বাড়াতে হবে। সবারই কিছু না কিছু আয়কর দেওয়া উচিত।
আসছে বাজেটে প্রথমবারের মতো আয় না থাকলেও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের বিধান রাখা হচ্ছে। কেউ যদি কোনো সেবা পাওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, অথচ তার করযোগ্য আয় নেই, তখন এ টাকা কর দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে এটা স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। অন্তত ৮ লাখ করদাতার করযোগ্য আয় নেই। তাদের কাছ থেকে নতুন অর্থবছরে ১৬০ কোটি টাকার বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা নতুন বাজেটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আয় নেই, এটা বলা যাবে না। কিছু না কিছু আয় থাকে। নতুন অর্থবছরে দেরিতে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। তবে এর জন্য দ্বিগুণ হারে জরিমানা দিতে হবে। বর্তমানে দেরিতে রিটার্ন জমা দিলে প্রদেয় করের ২ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। আসছে অর্থবছরে তা দিতে হবে ৪ শতাংশ হারে।
বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, চাপ কিছুটা হবে। বিশেষ করে যাদের আয় নেই, তারা রিটার্ন দিলে ন্যূনতম কর তাদের জন্য বোঝা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নানা কারণে এবারের বাজেট সরকারের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ ছাড়া বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে বিভিন্ন রকম। এর পাশাপাশি এটি নির্বাচনের বছরের বাজেট। আমি বলব-সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমানোর পদক্ষেপে। এর জন্য চিনি, ভোজ্য তেলসহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া দরকার। মোদ্দাকথা হলো-দেশের মানুষ কষ্টে আছে। তাই এবারের বাজেটটি যেন হয় সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বাজেট।
জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে গেইন ট্যাক্স দ্বিগুণ হচ্ছে। ঢাকায় রাজউক ও চট্টগ্রামের সিডিএর আওতায় জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। আর দেশের অন্য এলাকার ক্ষেত্রে তা ৩ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনসেটে খরচ বাড়বে। এসব ফোন তৈরি ও সংযোজনে ভ্যাট আর কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। ভ্যাটের বিদ্যমান হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এলপিজি সিলিন্ডারের খরচও বাড়বে। এলপিজি তৈরির কাঁচামালে শুল্ক বাড়তে পারে, সঙ্গে ভ্যাট। বিদ্যমান শুল্ক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ আর বিদ্যমান ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ফ্রিজ, ফ্যান ও এস্কেলেটরেও খরচ বাড়বে।
এস্কেলেটর তৈরির কাঁচামালের শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকতে পারে বাজেটে। বর্তমানে তা ৬ থেকে ১১ শতাংশ। পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে কর রেয়াত কমতে পারে। এতে কিছু সুবিধা হারাতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে করদাতারা তাদের করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পুঁজিবাজার, ডিপোজিট সঞ্চয় স্কিম (ডিপিএস) ও জীবনবিমায় বিনিয়োগ করে ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পেয়ে থাকেন। এটা আসছে অর্থবছরে তুলে দেওয়া হতে পারে। নতুন অর্থবছরে একের অধিক গাড়ির মালিককে কার্বন কর দিতে হতে পারে। পরিবেশদূষণ এবং যানজট ঠেকাতে এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের কর আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। গাড়ির ইঞ্জিনক্ষমতা অনুযায়ী করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
কোমল পানীয় পান করতে হলে আসছে অর্থবছরে বাড়তি খরচ হবে ভোক্তার। কারণ, নতুন কোমল পানীয় খাতের টার্নওভার কর ৮ গুণ বাড়তে পারে। বিদ্যমান টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। ধূমপায়ীদেরও সিগারেটের পেছনে সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি খরচ হতে পারে। সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্কও বসতে পারে। নতুন অর্থবছরে ভ্রমণ করেও পরিবর্তন আসতে পারে। ভ্রমণ কর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। বর্তমানে গন্তব্য বিবেচনায় ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত ভ্রমণ কর দিতে হয়। এর ফলে উড়োজাহাজে ভ্রমণে ভোক্তার খরচ বাড়তে পারে। নতুন অর্থবছরে সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর খরচ বাড়তে পারে, যা বাড়ি ও ফ্ল্যাটের খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে ২০ টাকা ভ্যাট আরোপ হতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের গৃহস্থালি পণ্যের পেছনে খরচ বাড়তে পারে। আসছে অর্থবছরে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি টেবিল ও রান্নার পাত্র, টিস্যু পেপারসহ বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।
ব্যাংক ডিপিএসে (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) কর রেয়াতের সীমা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকে বেশি টাকা জমালে বেশি কর ছাড় পাওয়া যাবে। বর্তমানে ৬০ হাজার টাকা (মাসিক পাঁচ হাজার) ডিপিএসে কর রেয়াত পাওয়া যায়, এটি বাড়িয়ে এক লাখ ২০ হাজার (মাসিক ১০ হাজার) টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভাড়া দিলে বাড়িওয়ালার রিটার্নের রসিদ দেখানো বাধ্যতামূলক হচ্ছে নতুন বাজেটে। নতুন খাতের মধ্যে একটি হলো সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো বাড়িওয়ালা যদি বাড়ি ভাড়া দেন, তা হলে তাকে চুক্তিনামার সঙ্গে রিটার্নের রসিদ দিতে হবে। তবে এই ভাড়াটে হতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক ভাড়াটে। যেমন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ফার্ম, ব্যাংক এবং বীমাসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের সোসাইটি, সমবায়, ট্রাস্ট, ফান্ড, ফাউন্ডেশন, এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে ব্যাংক হিসাব খুললে এবং চালু রাখতে হলেও রিটার্নের রসিদ দেখাতে হবে। এ ছাড়া ভবন ও ভূমি লিজ নিতে চাইলেও রিটার্নের রসিদ লাগবে।
বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ নেই। ১২ সংখ্যার টিআইএন থাকলে অবশ্যই বছর শেষে আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত জানিয়ে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতে হয়। আগামী বাজেটে করদাতাদের এ ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব আসতে পারে নতুন বাজেটে। এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, একবার টিআইএন নিলে তা আর বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশে রাখা হয়নি। আবার যাদের ১২ সংখ্যার টিআইএন আছে, তাদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। শুধু যারা জমি বেচাকেনা ও ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য টিআইএন নেন, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে টিআইএন বাতিল বা স্থগিত রাখতে উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখিয়ে আবেদন করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১০ লাখের মতো করদাতা আছেন, নানা কারণে যাদের টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করা যেতে পারে। বর্তমানে ৮৭ লাখ টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে এক-তৃতীয়াংশ করদাতা বা ৩০ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন দেন। বাকিরা রিটার্ন জমা দেন না।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, যাদের করযোগ্য আয় নেই, টিআইএন বাতিল করা হলে এনবিআরের সার্ভার থেকে তাদের বাদ দেওয়া বা টিআইএন স্থগিত করে দেওয়া হবে।
সরকারও এবারের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে। এই কর্মসূচির আওতা আগামী অর্থবছরে আরও বাড়ানো হচ্ছে। যাতে অধিকসংখ্যক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ৭.৩৫ লাখ বাড়ানো হচ্ছে। এসব খাতে মাসিক ভাতার হারও বাড়ানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ তিন ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দ থাকছে প্রায় ১.৩০ লাখ কোটি টাকা। এবারের মূল বাজেটে যার পরিমাণ ১.১৩ লাখ কোটি টাকা।
এদিকে, সরকারি-বেসরকারি ৩৮ ধরনের সেবা নেওয়া আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছর থেকে ৩৮ ধরনের সেবা নিতে করদাতাদের রিটার্ন জমার রসিদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। আসছে বাজেটে এ বিধান আরও কঠোর করা হচ্ছে। করযোগ্য আয় থাকুক আর না-ই থাকুক, ন্যূনতম কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। কারণ আয়কর অধ্যাদেশের সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে নির্ধারিত ৩৮ ধরনের সেবার মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন; ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে; ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারধারী হলে; ব্যবসায় সমিতির সদস্য হলে; কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, করযোগ্য আয় থাকুক আর নাই-থাকুক, আগামী অর্থবছর থেকে ন্যূনতম টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। ন্যূনতম কর না দিলে এসব সেবা মিলবে না।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। ফলে করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
ডব্লিউএইচ/এএস