রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যেভাবে ৭৮৬ কোটি থেকে ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৩, ১২:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

যেভাবে ৭৮৬ কোটি থেকে ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উত্থাপন হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ উত্থাপিত ওই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) উত্থাপিত হতে যাচ্ছে দেশের ৫৩তম বাজেট। সম্ভাব্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা স্বাধীনতার ৫২ বছরের ব্যবধানে উত্থাপিত হতে যাওয়া বাজেটের ৯৬৯ গুণ বড়।

অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবে বাজেটের আকারও বাড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে টানা তিনটি বাজেট (১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪, এবং ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর) উত্থাপন করেন তাজউদ্দীন আহমদ। স্বাধীনতার পরের প্রথম দুটি বাজেটের আকার ছিল যথাক্রমে ৭৮৬ কোটি টাকা, ৯৯৫ কোটি টাকা। তিন বছরের মাথায় বাজেটের আবার হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়।


বিজ্ঞাপন


এরপর ১৪ বছর লেগেছে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে। ১৯৮৮ সালে এই বাজেট পেশ করা হয়। এরপর ২১ বছর পর এক লাখ কোটিতে উন্নীত হয় বাজেটের আকার। এটি ২০০৯ সালের কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে। এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে সরকার।

তাজউদ্দীন আহমদ তিন বছর বাজেট ঘোষণা করার পর ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৪৯.১৯ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন ড. আজিজুর রহমান। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-৭৭ ১ হাজার ৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা, ১৯৭৭-৭৮ ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা, ১৯৭৮-৭৯ ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা, ড. এম এন হুদা ১৯৭৯-৮০ ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, এম সাইফুর রহমান ১৯৮০-৮১ ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, ১৯৮১-৮২ ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৮২-৮৩ ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, ১৯৮৩-৮৪ ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

এম সাইদুজ্জামান ১৯৮৪-৮৫ ৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, ১৯৮৫-৮৬ ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা, ১৯৮৬-৮৭ ৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা, ১৯৮৭-৮৮ ৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, ১৯৮৮-৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা, ১৯৮৯-৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, ১৯৯০-৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, এম সাইফুর রহমান ১৯৯১-৯২ ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা, ১৯৯২-৯৩ ১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, ১৯৯৩-৯৪ ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ১৯৯৪-৯৫ ২০৯৪৮ কোটি টাকা, ১৯৯৫-৯৬ ২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

এসএএমএস কিবরিয়া ১৯৯৬-৯৭ ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা, ১৯৯৭-৯৮ ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, ১৯৯৮-৯৯ ২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, ১৯৯৯-০০ ৩৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা, ২০০০-০১ ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, ২০০১-০২ ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা, এম সাইফুর রহমান ২০০২-০৩ ৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, ২০০৩-০৪ ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, ২০০৪-০৫ ৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, ২০০৫-০৬ ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, ২০০৬-০৭ ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা, এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, ২০০৮-০৯ ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, ২০১০-১১ ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা, ২০১১-১২ ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১২-১৩ ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।


বিজ্ঞাপন


আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, ২০২১-২২ ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

budget
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট থেকে শুরু করে গত বছর পর্যন্ত যেসব বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে দেখা যায় সময়ের সাথে প্রত্যেকটা বাজেটের আকার বেড়েছে। তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। এই লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয়তন বাড়ছে। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন বড় বাজেটে সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেটে টাকার পরিমাণ বাড়লেও অর্থনীতির অনুপাত হিসেবে বাজেট বাড়েনি। তাদের মতে, সময়ের পরিবর্তনে বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে 'গুণগত' যে পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।

গত পাঁচ দশকের বাজেট প্রণয়নের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের ওপর নির্ভর করে শিল্পায়নের কথা চিন্তা করা হতো, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে রাষ্ট্রের জায়গায় ব্যক্তিখাতের ভূমিকাকে বড় করা হয়েছে।

১৯৭২ সালের ৩০শে জুন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট উপস্থাপিত হয়। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। সেই বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তাজউদ্দিন আহমদের তৈরি ওই বাজেটটি বাংলাদেশের একটি 'ঐতিহাসিক বাজেট' হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশ মুক্ত হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মাথায় ওই বাজেট হয়। যেখানে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল না, রাজস্ব আদায় সেভাবে ছিল না। সরকারের বৈদেশিক সাহায্যের ব্যাপারটিও অনিশ্চিত ছিল। সম্পদের অনিশ্চিত পরিস্থিতির ভেতরে একদিকে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের বিষয় ছিল, এর পাশাপাশি যেসব অবকাঠামো ভগ্ন অবস্থায় ছিল- হাজার হাজার সেতু, একইসঙ্গে কৃষি শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুনর্বাসন বা পুনর্গঠনের বিষয় ছিল।

দেশের প্রথম বাজেটটি আকারে ছোট হলেও তা 'গুণমানসম্পন্ন' বাজেট ছিল বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

স্বাধীনতার ৫১ বছরের ব্যবধানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল সেটির আকার হয়েছিল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবার পঞ্চমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৬২ হাজার লাখ কোটি টাকা।

mustafa

বাংলাদেশের প্রথম দিকের বাজেটে বৈশ্বিক চিন্তাভাবনার বিষয়টি প্রতিফলিত না হলেও আশির দশকের শেষ দিক থেকে বাজেটে কাঠামোগত পরিবর্তন দেখা যায়।

আশির দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগ তুলে দিয়ে সেটা ব্যক্তি খাতে যাবার যে প্রক্রিয়াটা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে এসে সেটা আরও ত্বরান্বিত হয়।

অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি শুরু হলো তখন বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে যে সুযোগ-সুবিধা ছিল তাতে যুক্ত হতে থাকলাম আমরা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যে কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ তৈরি করে দিল তাতে কিন্তু আমরা জড়িত হলাম। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে যুক্ত হলাম আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে নব্বইয়ের দশকে সেটা আরও প্রসারিত হলো। তার মতে তারপরে যে সরকারই এসেছে মোটামুটি একই ধরনের নীতিমালা অর্থাৎ মুক্ত বাজার অর্থনীতি বজায় রেখেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ এরশাদ সরকারের শাসনামলের বাজেটকে ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফ'র কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি প্রতিপালনের বাজেট’ বলে মনে। তিনি বলেন, ‘সব ভর্তুকি প্রত্যাহার, সমস্ত কলকারখানা ব্যক্তিখাতে প্রত্যার্পন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা, বাংলাদেশের শিল্প ব্যাংকগুলো থেকে টাকা দিয়ে ব্যক্তিখাতগুলোকে কৃত্রিমভাবে দাঁড় করানো এবং মুহূর্তের মধ্যে কিছু লোক বেশ বড় টাকার মালিক হয়ে গেল। বাজেট বাড়ল। কিন্তু বাজেটের টাকা যোগাড় হয় না দেখে তখন বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গেল।

তার মতে সেই সময়ে বিদেশ নির্ভর বাজেট ব্যবস্থা ছিল। সেই দাতা নির্ভর বাজেট থেকে বের হয়ে স্বাধীন বাজেট প্রণয়ন তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

কয়েক দশকের বাজেট পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, বাংলাদেশে অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মনোযোগ বেড়েছে। পাশাপাশি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পও হাতে নিচ্ছে৷

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘মানবসম্পদের দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষা স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। এটা আশির দশকের দিক থেকে দেখেছি। সে সময় থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা স্বাস্থ্যের দিকে অগ্রগামী ছিল বলে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে দেখেছি আমরা ভৌত অবকাঠামোর প্রতি প্রচুর জোর দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি এর সাথে বিদ্যুতের ওপরেও জোর দেয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে যেটা হয়েছে কতগুলো বিষয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ব্যাপারে ঐক্যমত বিরাজ করে।

অর্থনীতিবিদদের মতে বাজেট এখন অনেক বেশি নীতিভিত্তিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে হচ্ছে৷ যেমন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি অথবা সরকারের বিভিন্ন খাতভিত্তিক পরিকল্পনাকেও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে৷

অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেট বড় হয়েছে, সক্ষমতার জায়গা অবশ্যই তৈরি হয়েছে- চাহিদার জায়গা সৃষ্টি হয়েছে অনেক জায়গায় কার্যক্রম চলছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু পঞ্চাশ বছর পর এসে বাজেট নিয়ে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে তা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়েই প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে বাজেটে যে গুণগত পরিবর্তন দরকার ছিল সেটা তেমন একটা হয়নি।

অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির আকার বেড়েছে -এর পাশাপাশি কর যতটুকু পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল সেই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, রাজস্বের ক্ষেত্রে বর্ধিত রাজস্ব কোথা থেকে আসবে? এটা কি প্রত্যক্ষ কর থেকে আসবে নাকি পরোক্ষ কর থেকে আসবে? যার দেওয়ার সামর্থ্য আছে সে দেবে নাকি যার সামর্থ্য সীমিত তারা সকলেই ভ্যাট দিতে থাকবে? নাকি আমি সম্পদ কর বসাব? যে বরাদ্দগুলো দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর কাঠামোগুলো কীরকম– আমি যে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ দিচ্ছি সেখানে কি বিল্ডিং উঠবে নাকি শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য আমরা খরচ করব? এগুলো হলো গুরুত্বপূর্ণ।

দীর্ঘ ৫২ বছরে বাজেটের অংক বাড়লেও অর্থনীতির অনুপাত হিসেবে বাজেট বাড়েনি বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘জিডিপির ১৪/১৫ শতাংশে আমরা আটকে আছি। করের দিক থেকে যেহেতু আমরা দশ শতাংশের বেশি যেতে পারছি না জিডিপির তার ফলে আমরা পাঁচ শতাংশের ঘাটতি বাজেট নিয়ে এগোচ্ছি। বাজেটের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের আয় বাড়াতে হবে এবং সেই আয় দিয়ে গুণমানসম্পন্ন ব্যয় করতে আমাদের শিখতে হবে।’

এবারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার যে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। অধ্যাপক এম এম আকাশের মতে, ‘এখন যে মুদ্রাস্ফীতি চলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ডলার সংকট- এর মধ্যে সরকার ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। ‘এবারের বাজেট সন্ধিক্ষণের বাজেট বলে মনে করছেন তিনি।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর