শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বুরো ও চবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল চট্টগ্রাম
  • ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনারের বাসভবনে পাথর নিক্ষেপ
  • নওফেলের বাড়িতে আগুন
  • চবি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
  • জুমা’র নামাজ শেষে কফিন মিছিল

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কফিন মিছিল করেছে জুলাই ঐক্যজোট। 


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজ শেষে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ এলাকা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামালখান মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবন ঘেরাও করে পাথর নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ করেছে তারা।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি জানান, শুক্রবার জুমা’র নামাজ শেষে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কফিনের আদলে তৈরি প্রতীকী লাশ বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকায় জড়িয়ে বহন করে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় তারা হাদির হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই; শরিফ ওসমান হাদির রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; খুনিদের বিচার চাই; আমি কে, তুমি কে, হাদি, হাদি; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা; আমরা সবাই হাদি হবো, বুক চিতিয়ে লড়ে যাব সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।


বিজ্ঞাপন


মিছিল শেষে জামালখান মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের একজন সাহসী কণ্ঠস্বর শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেফতার করাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, শরিফ ওসমান হাদি শুধু একজন সংগঠক ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণমানুষের কণ্ঠস্বর ও নিপীড়িত মানুষের সাহসী প্রতিনিধি। তার ওপর পরিকল্পিত ও কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়ে যারা তাকে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর দুই নম্বর গেইট ও ষোলশহর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা চশমা হিল এলাকায় জড়ো হন। সেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির ভেতর থেকে আসবাবপত্র ও একটি মোটরসাইকেল বের করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। 

একই সময় নওফেলের বাসভবনের সামনেও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন বাসায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এর আগে হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে নগরীর বিপ্লব উদ্যান, দুই নম্বর গেইট ও ওয়াসা মোড় এলাকায় শতাধিক তরুণ-যুবক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।

বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধের দাবিও তোলে। এদিকে নগরের আরেক অংশে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার এ সময় বাসভবনে ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা বাসভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করে।

পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তিন-চার রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য ও একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের পাশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে রাত ১১টার দিকে ফটিকছড়ি উপজেলার বিবিরহাট এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র জনতা। এতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

চট্টগ্রামে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিবিরহাটে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। সেখানে যানচলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মধ্যরাতে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়।

OS

চবিতে শিবিরের বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। তারপর সোহরাওয়ার্দী হল, আলাওল হল ও শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করে জিরো পয়েন্টে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এ সময় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ভারতের আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ; আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান; লাল জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার; আমরা সবাই হাদি হব, গুলির মুখে কথা কব প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা যুগে যুগে দেখেছি ফ্যাসিবাদীরা, জঙ্গিবাদীরা বিপ্লবীদের গুপ্তভাবে হত্যা করে। যুগে যুগে যারা ফ্যাসিবাদ, জুলমবাজ এবং কালচারাল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তখন সন্ত্রাসীরা তাদেরকে হত্যা করার জন্য নীলনকশা করেছে। হাদিকেও সেভাবেই হত্যা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর অনেক জুলাই যোদ্ধা নৈতিকতা বিসর্জন দিলেও আমাদের নেতা হাদি তার নৈতিকতার সর্বোচ্চ স্থান ধরে রেখেছে।

সমাবেশে চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে যারা কাজ করেছে তাদের মধ্যে শরিফ ওসমান হাদি অন্যতম। মধ্যযুগীয় কায়দায় তার মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ক্ষতি হয়তো বাংলাদেশ আর কখনও পূরণ করতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যারা কাজ করবেন তাদের পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী হিসেবে থাকবেন ওসমান হাদি।

তিনি আরও বলেন, ওসমান হাদির জনপ্রিয়তা যখন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা থেকে শুরু করে যখন গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে যায়, তখন একটি পক্ষ তা মেনে নিতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা ও ভারতের যৌথ পরিকল্পনায় এবং যারা ভারতীয় আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তাদের নীলনকশায় তাকে শহীদ করা হয়েছে। আমরা আহ্বান জানাতে চাই, সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি হত্যাকারীদের বের করতে না পারে; তাহলে মসনদে বসে থাকার নৈতিক কোনো অধিকার তাদের নাই।

উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় ওসমান হাদিকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তার মাথার ডান দিক দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। হাদির মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর নগরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল দল মাঠে রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর