রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনটির মালিক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপসহ চারজনের নামে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানা-পুলিশ।
শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে রমনা মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন— ভবনটির নিচতলায় থাকা চা-কফির দোকান চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক (২৯), গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল (৪০) এবং কাচ্চি ভাই নামে রেস্তোরাঁর মালিক মো. সোহেল সিরাজ (৩৪)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারনামী আসামিদের মধ্যে চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ভবনটির মালিক ও ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এবং দোকান ভাড়া দেন। রেস্টুরেন্টগুলো যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার এবং চুলা ব্যবহার করে। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য ভবনের মালিক ও ম্যানেজারের যোগসাজশে চুমুক, কাচ্চি ভাই, মেজবানী রেস্টুরেন্ট, খানাস ফ্ল্যাগশিপ, স্ট্রিট ওভেন, জেষ্টি, হাক্কা ঢাক্কা, শেখহলি, ফয়সাল জুসবার (বার্গার), ওয়াফেলবে, তাওয়াজ, পিৎজা–ইন, ফোকো এবং এম্ব্রোশিয়া রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তারা জননিরাপত্তা তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধানতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং বিপজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিলেন। এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এই আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোঁয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্ট ও দোকানে অবস্থানকারী লোকজন আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়া শ্বাসনালীতে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান এবং গুরুতর আহত হন
বিজ্ঞাপন
পুলিশ মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করে, ভবনটি আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে মালিক ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ব্যবসায়িক কাজে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়। ভবনটির যেসব তলায় রেস্তোরাঁ ছিল, সেগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেয়নি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নেই। ভবনের মালিক, ম্যানেজার ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম মানেননি। তারা আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ভাড়া দিয়েছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শকদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ স্থাপন করে, গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করেছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে দশটায় গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে অগুণের সূত্রপাত ঘটে। আগুনে পুড়ে ৪৬ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৪৩ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাকিদের চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে ১৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
এমএইচটি