বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

সন্তানদের জন্য স্ত্রীর মৃত্যুর পর করেননি বিয়ে, আগুনে হারালেন মেয়েকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

সন্তানদের জন্য স্ত্রীর মৃত্যুর পর করেননি বিয়ে, আগুনে হারালেন মেয়েকে

ছয় বছর আগে ২০১৮ সালে মাকে হারিয়েছেন লামিসা ইসলাম। এরপর ছোট বোন আর বাবাকে নিয়েই চলে তাদের সংসার। সন্তানদের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি লামিসার বাবা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম নাসির। মেয়েরাই ছিলেন তার জগত জুড়ে। সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা বিয়ের কথা বললেও সেদিকে যাননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। সুযোগ পেলেই মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে বের হতেন তিনি। তার বড় মেয়ে লামিসা ভিকারুন্নেসা থেকে এসএসসি ও হলিক্রস থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর মেধার স্বাক্ষর রেখে পা রাখেন বুয়েটে। মেকানিক্যাল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন তিনি। বুয়েটে পড়া অসমাপ্ত রেখেই মায়ের পথ ধরলেন লামিসা। বাবা ও বোনকে একা রেখে গেলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বইমেলা থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে কাচ্চি খেতে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে যান লামিসা। সেখানে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। আগুন লাগার পর দৌড়ে ছাদের দিকে যাওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাদে উঠতে পারেননি। এসময় লামিসা তার বাবাকে ফোনে জানিয়েছিল আগুনের ঘটনা। কিন্তু এরপর থেকেই তার মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।


বিজ্ঞাপন


বুয়েটের ২২তম ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী লামিসার নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া গিয়ে শ্বাসনালী পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তার বাবা নাসিরুল ইসলাম। ৬ বছর আগে স্ত্রীকে হারানোর সেই দিন যেন আবারও নেমে এলো তার জীবনে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে সন্তানদের নিয়ে রমনার পুলিশ কমপ্লেক্সে থাকেন নাসিরুল ইসলাম। একইসঙ্গে বাবা-মা উভয়ের ভূমিকাই পালন করতেন দুই মেয়ের জীবনে। কত স্বপ্ন ছিল তাদের নিয়ে! সেই স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো সর্বনাশা আগুনে। 

ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি রুহুল আমিন শিপার লিখেছেন, ‘প্রায় ৬ বছর আগের কথা। নাসির পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালের ডি ব্লক এর সামনে। সেখানে একটি ফ্রিজার ভ্যানে তার স্ত্রীর মরদেহ রাখা। নাসিরের জিম্মায় ছোট্ট দুটি মেয়েকে রেখে ভাবি একা চলে গেলেন।’

একটা ঘটনা উল্লেখ করে ডিআইজি লেখেন, কয়েক বছর আগের কথা। তখন বেনজির আহমেদ স্যার র‍্যাবের মহাপরিচালক। পুলিশ সদর দফতরে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নাসিরের একটা প্রেজেন্টেশন দেখে প্রকাশ্যে বলে ফেললেন, ‘ইউ আর সো ইন্টেলিজেন্ট। কিন্তু আমি তোমাকে চিনি না কেন?’ এরপর বেনজির স্যার আইজিপি হয়ে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারে হাত দিলেন। এআইজি রিক্রুটমেন্ট হিসেবে মেধাবী নাসির একটি অসাধারণ নিয়োগ কাঠামো তৈরি করে দিল। যেখানে চাইলেও দুর্নীতি কিংবা পক্ষপাতিত্ব করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সেই কাঠামোতেই নিয়োগ চলছে।


বিজ্ঞাপন


ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেছেন, ‘দুই মেয়ে নিয়ে নাসিরের একার সংসার। একদিন শুধু বলেছিলাম, আর বিয়ে-শাদি করলে না? একটু হেসে মাথা নেড়ে ও বলল, না, স্যার। ওর মেয়েরা খুবই মেধাবী। বড় মেয়ে সম্ভবত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিল। কলেজ শেষ করে সে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল।’

‘নাসিরের জীবনে ছয় বছর আগের সেই রাত আবার ফিরে এলো। গতরাতে আগুন লাগার সময় বেইলি রোডের সেই রেস্তোরাঁয় ওর বুয়েট পড়ুয়া মেয়েটা ছিল। সে আর ফেরেনি, চলে গেছে জীবনের ওপারে। বছর ছয়েক আগে বউ মরে যাওয়ার রাতে নাসিরের সেই চেহারার কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবার অবশ্য ওর সাথে দেখা হয়নি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরের পথে আছে সে।’

ডিআইজি রুহুল আমিন শিপার লিখেন, ওকে ফোন দিতে মন চাইছে না। তাই হোয়াটসঅ্যাপে শুধু এই মেসেজটা দিয়েছি, ‘নাসির, আমার অন্তরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। বাসায় বসে এখন কাঁদছি। এক জীবনে আর কত কষ্ট বাকি তোমার?’

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর