বাড়ির বাইরে সারিবদ্ধভাবে রাখা পাঁচটি খাটিয়া। ভেতরে সন্তানের জন্য সত্তোরোর্ধ্ব মা সৈয়দা হেলেনা বেগমের বুকফাটা আর্তনাদ। আজ শুক্রবার পরিবার নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা ছিল মোবারক হোসেনের। তাই ভালো করে বাজার-সদাইও করে রেখেছিলেন মা। মোবারক মাকে দেওয়া কথা রেখেছেন ঠিকই। তবে জীবিত নয় প্রাণহীন দেহে। তার সঙ্গে নিথর দেহে এসেছেন মোবারকের স্ত্রী ও তিন সন্তান।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার বেইলি রোডের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ কাশেম মিয়ার ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেনের পরিবারের পাঁচজনও ছিলেন। মোবারক ছাড়াও তার পরিবারের যারা মারা গেছেন তারা হলেন স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৩৫), দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফিয়া (১৭) ও সৈয়দা নূর (১২) এবং ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ (০৭)।
বিজ্ঞাপন
একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে শাহবাজপুর গ্রামের পরিবেশ। সবকিছুই যেন থমকে গেছে!
শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুর সোয়া ৩টায় লাশবাহী গাড়িতে করে শাহবাজপুর গ্রামে আনা হয় মোবারক হোসেন, তার স্ত্রী-সন্তানদের লাশ। তাদের পাঁচজনের জন্য বাড়ির পাশেই একসঙ্গে খোঁড়া হয়েছে পাঁচটি কবর। বাদ আসর জানাজা শেষে বাবা সৈয়দ কাশেম মিয়ার কবরের পাশেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মোবারক হোসেন।
সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা হেলেনা বেগম। কিছুক্ষণ পরপরই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। একসঙ্গে এভাবে পরিবারের সবার মৃত্যু হবে তা মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
বিজ্ঞাপন
নিহত মোবারকের চাচা আব্দুল কাইয়ূম জানান, চার ভাই-বোনের মধ্যে মোবারক দ্বিতীয়। ১০-১২ বছর আগে ইতালি পাড়ি জমান মোবারক। সম্প্রতি ইতালিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন পান তিনি। তাই স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়েকে ইতালিতে নিতে এক মাস আগে দেশে আসেন। পরিবারের সবারই ভিসা হয়েছে ইতালির। আগামী ১০ মার্চ তাদের ইতালির ফ্লাইট ছিল।
তিনি আরও বলেন, মোবারকের পরিবার কয়েকবছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছিলেন। প্রবাসে যাওয়ার আগে সন্তানদের ইচ্ছাপূরণে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে যান পরিবারের সবাই। সেখানেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মোবারক ও স্ত্রী এবং তিন সন্তানের মৃত্যু হয়। একসঙ্গে পুরো পরিবারের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল স্বজন ও স্থানীয়রাও। পুরো গ্রামজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।
প্রতিনিধি/এমআর