রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্য থেকে ৪০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। ছয়জনের লাশ হস্তান্তরের অপেক্ষায় এখনও মর্গে রয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করা যায়নি। বাকি তিনজনের স্বজনেরা এখনো আসেননি।
এ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয় পরিবারের ১৫ জন রয়েছেন। আহত অন্তত ২২ জন। তাদের বেশির ভাগই শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার (১ মার্চ) ভোর থেকে নিহতদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
হস্তান্তর করা মরদেহর মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মগবাজারের সৈয়দ মোবারক হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪১), দুই মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জহুরা কাশপিয়া (১৬), আমেনা আক্তার নূর (১৩) ও ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮)। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম লাকী (৪৭) ও তার মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন নিকিতা (২১)। শান্তিবাগ এলাকার পপি রায় (৩৩) এবং তার মেয়ে সম্পূর্ণা পোদ্দার (১২) ও ছেলে সংকল্প সান (৮)।
মতিঝিল আরামবাগের নাজিয়া আক্তার (৩১) তার দুই সন্তান আয়ান (৮) ও আয়াতকে (৬) নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন ওই ভবনে। দুই সন্তানকে নিয়ে মারা যান মা। তাদের মরদেহ নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। এছাড়া একই পরিবারের মতিঝিল এজিবি কলোনির আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহরান কবির দোলা (২৯) এবং তার ছোট বোন মাইশা কবির মাহি (২১)। তারা দুই বোন সেখানে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন।
কাকরাইলের ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২) ও সাদিয়া আফরিন আলিশা (১৩)। তারা দুই বোন। ফৌজিয়া আফরিন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। শুক্রবার তার মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সাদিয়া আফরিন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের বাবার নাম কোরবান আলী। তাদের সঙ্গে খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু (১৯) ছিলেন। একসঙ্গে ভবনটিতে রাতের খাবার খেতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। তাদের সবার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। আজ স্বজনেরা লাশ নিয়ে যান।
অপরদিকে, বেইলি রোডে আগুনের প্রাণ হারানোর তালিকায় রয়েছেন দুই নারী দাবাড়ুর মা শম্পা সাহা (৪৫)। তার দুই মেয়ে শ্রেয়া পোদ্দার ও প্রজ্ঞা পোদ্দার বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের রেটিং ও নারী দাবার অনেক টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নেন। মেয়েরা বর্তমানে কানাডায় থাকেন। শম্পার বাসা মৌচাকে। ঘটনার দিন তিনি একাই ওই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। তার মরদেহ নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। মেয়েরা দেশে এলে সৎকার করা হবে।
বিজ্ঞাপন
খিলগাঁওয়ের আশরাফুল ইসলাম আসিফ (২৫) ও তুষার হাওলাদার (২৩), বংশালের নুরুল ইসলাম (৩২), নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেন (২৪), মাদারীপুরের মোহাম্মদ জিহাদ (২২), যশোরের কামরুল হাসান রকি (২০), ভোলার দিদারুল হক (২৩), মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম (৬৫), টাঙ্গাইলের মেহেদী হাসান (২৭), মুন্সীগঞ্জের জারিন তাসনিম খান প্রিয়তি (২০) ও গুলশানের জুয়েল গাজীর (৩০) লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী পাবনা ফরিদপুরের সাগর হোসেন (২৪), পিরোজপুরের তানজিলা নওরিন এশা (৩৫) ও শেরপুরের শিপন (২১), বুয়েট শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (২০) ও লামিশা ইসলাম (২০)। লামিশার বাবা নাসিরুল ইসলাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে কর্মরত। এ ছাড়া বরগুনার ছেলে নাঈম (১৮)। ভোলা সদরের সিরাজুল ইসলামে ছেলে নয়নের (১৭) লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে একজন সংবাদকর্মীর মরদেহ শনাক্ত হলেও তার অভিভাবক নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষার পর মেয়ে দাবি করা তার বাবা-মায়ের কাছেই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ভর্তি আছেন—ফয়সাল আহমেদ (৩৮), সুজন মন্ডল (২৪) প্রহিত (২৫) আবিনা (২৩) রাকিব হাসান (২৮) কাজি নাওশাদ হাসান আনান (২০), আজাদ আবরার (২৪), মেহেদী হাসান (৩৫), রাকিব (২৫) ও সুমাইয়া (৩১), জহিরুল (২৬) এবং ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন ইকবাল হোসেন (২৪), ও যোবায়ের (২১)।
/এএস