সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে তদন্ত চায় সুজন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২২, ০১:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে তদন্ত চায় সুজন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বাড়াতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তদন্ত দাবি করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংস্থাটির দাবি, কুমিল্লার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শেষ দিকে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তাই কমিশনের ওপর আস্থা ফেরাতে নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে একটি কমিটি করে তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায় সুজন।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের বিশ্লেষণ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই নির্বাচনে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনের অনেক আগেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা, দ্রুততম সময়ে প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত মেজর, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের কপি ওয়েবসাইটে প্রকাশ।

যদিও বিশ্লেষণ করার জন্য যে ধরনের ফাইল (যেমন এক্সেল) প্রয়োজন তা এখনও ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে সুজন। তবে সুজনের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনের আগে পরে বেশ কিছু নেতিবাচক দিকও উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে সুজন।

লিখিত বক্তব্যে সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর নির্বাচনী এলাকায় শোডাউন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটের আগের রাতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য জরিমানাও করা হয়েছে।

কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের এলাকায় উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরে সুজন দাবি করেছে, সব কিছু ছাপিয়ে মূল আলোচিত ঘটনা ছিল কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি।


বিজ্ঞাপন


সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তিনি সে নির্দেশ উপেক্ষা করে এলাকায় অবস্থান করেন। নির্দেশ অমান্য করা সত্ত্বেও বিধিমালার ৪ ৩২ ধারা অনুযায়ী শাস্তির বিধান প্রয়োগ না করায় কমিশন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পরবর্তী সময়ে কমিশন থেকে বলা হয়, বাহারকে এলাকা ছাড়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি কমিশনের মর‌্যাদাও ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

ফলাফল ঘোষণার শেষ দিকে চার কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করার বিষয় নিয়ে সুজনের দাবি- এতে ফলাফল নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা যায়, ১০১টি কেন্দ্রের ঘোষণার পর চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হঠাৎ করে বন্ধ করে দেন রিটার্নিং অফিসার। সেই সময় পর্যন্ত ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফলে মনিরুল হক সাক্কু এগিয়ে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে (১০৫টি কেন্দ্র) তিনি পরাজিত হন ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে। পূর্ব থেকেই পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকায় জনগণ এক ধরনের সন্দেহ-সংশয় নিয়েই এই নির্বাচনের দিকে নজর রাখছিল। এই ঘটনায় সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।

সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু গত ২৫ জুন চারটি কেন্দ্রের পুনঃভোট চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি আবেদন করেছেন। তবে এও সত্য যে, মনিরুল হক ঢালাওভাবে তাকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করলেও, সবশেষ ঘোষিত চারটি কেন্দ্রের ফলাফল জালিয়াতি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া, এর সপক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

ওই চার কেন্দ্রের ফলাফল পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে এমন দাবি করে সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, অফিসার স্বাক্ষরিত ফলাফল বিবরণীতে উল্লেখ করা সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যে ওই চারটি কেন্দ্রের ফলাফল গণনা শেষ হয়েছে। সেই ফলাফল পৌঁছাতে দেরি হওয়ার বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।

কুমিল্লা নির্বাচন নিয়ে তদন্তের দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনগণ চায় এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হোক। সুজন মনে করে নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা না ফিরলে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। তাই, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফেরানোর প্রয়োজনেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যথাযথ তদন্তপূর্বক এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে তাদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেবায়েত ফেরদৌস, একরাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর