লামিয়া আক্তার। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ঈদুল আজহার দিন প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন ওই শিক্ষার্থী।
লামিয়ার বাবা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আল আমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের দিন দুপুর থেকে আমার মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। ওষুধ খাওয়ানো হলেও জ্বর কমে নাই। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাকে কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গিয়ে জ্বরের সঙ্গে বমি শুরু হয়। পরে বমি কমলেও জ্বর এখনও আছে।
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর টাইফয়েড ধরা পড়ে। তাই এখনও চিকিৎসা চলছে।
লামিয়ার বাবা বলেন, ঈদের সময় আমার মেয়ের জ্বর হওয়ায় বাসার সবার ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে। হাসপাতাল ও বাসায় যাতায়াত করতে করতে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করতে পারি নাই পরিবারের বাকি সদস্যরা।
একই পরিস্থিতি ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাবানা বেগমের পরিবারেও। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার এক আত্মীয়ের তিন বছরের মেয়ে ঈদের আগের দিন জ্বরে আক্রান্ত হয়। ঈদের পরদিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। তিনদিন হাসপাতালে থাকার পর বাসায় নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে শিশুটি। তবে জ্বর কমায় তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলা হয়।
বিজ্ঞাপন
শাবানা বেগম বলেন, ঈদের সময় শিশুটি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় আমাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না। তবে ঈদের সময় এলাকায় মশার ওষুধ ঠিকমতো দিলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম হতো বলে মন্তব্য করেন শাবানা।
শাবানা বেগমের ওই মন্তব্যের পর ঢাকা উত্তর সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিন রোড, পশ্চিম কারওয়ান বাজার, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলি-গলিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এছাড়া ওইসব এলাকায় একাধিক নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে ওইসব ভবনে নির্মাণকাজ বন্ধ। ওই ভবনগুলোর প্রায় সবগুলোতেই বৃষ্টির পানি জমে আছে।
এলাকাবাসী ঢাকা মেইলকে জানায়, ঈদের কয়েক দিন আগেই ভবনগুলোর শ্রমিকরা ছুটিতে গ্রামে চলে যায়। এতে ভবনগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। সেই জমে থাকা পানিতে মশা জন্ম নেয় বলে ধারণা করছেন তারা। এ জন্য এলাকার লোকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
একই এলাকার ১৬/৬ নম্বর বাসার পাশে ছোট একটি গলি রয়েছে। ওই গলিতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে টিনশেড কয়েকটি ঘর রয়েছে যেখানে অনেকগুলো পানির বোতলে বৃষ্টির পানি জমে আছে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকার বাসিন্দা রিমন মিয়া ঢাকা মেইলকে জানান, তাদের বাসায়ও একজন ডেঙ্গু রোগী আছেন। তিনি কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী। ঈদের পরদিন থেকে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। রিমন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় বিকেলে শুধু ধোঁয়া দেওয়া হয়। আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে নাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা জমে থাকা পানি অপসারণ করছি। প্রতিদিন সকালে অলি-গলি ও বাসা-বাড়িতে ওষুধ দেই। আর বিকালে ধোয়া দেই।
তিনি আরও বলেন, বাসায় বাসায় গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। বাসার ছাদে ও ফুলের টবে যাতে পানি জমে না থাকে সে জন্য সবাইকে বলা হচ্ছে। বাসা-বাড়ি ও এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ওই জনপ্রতিনিধি।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম নাখালপাড়া, পূর্ব নাখালপাড়া, শাহীনবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় বেশিরভাগ বাসার ছাদে ফুলের টব আছে। ওই টবগুলোতে পানি জমে থেকে মশার জন্ম নিচ্ছে।
পশ্চিম নাখালপাড়ার ২৭২ নম্বর বাসার গলিতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে পানি জমে আছে। বাসিন্দারা জানান, ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি জমে থাকে। বাসার গেটের পাশেই পানি জমে থাকায় এডিস মশার জন্ম হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ওই এলাকায় ২৪১ নম্বর বাসার গলিতে গিয়ে দেখা গেছে, একটি পুরাতন ভবনের আশপাশে ঝোপঝাড়। একই সাথে পানিও জমে আছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুরে সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সিটি করপোরেশনের তৎপরতা বাড়ালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় চিকিৎসকরা।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত আল রাজী হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন্স অফিসার ডা. ইউ কে ব্যানার্জী ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের পর থেকে জ্বরের রোগীর বেশি আসছেন। বেশিরভাগ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর কোনো ওষুধ নেই। সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এডিস মশা জন্ম বন্ধ করতে হবে। তা হলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও কমে যাবে।
কেআর