পরিষ্কার জমাটবদ্ধ পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়— এই বিষয়টি সবার জানা হলেও এডিস মশার এই স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে। এখন নোংরা পানিতেও জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গু রোগের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। আবার দিনের আলো নিভে গেলে যে এডিসের উপদ্রব কমে যেত, সেই এডিস মশা এখন রাতেও রোগ ছড়াচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার ঢাকা মেইলকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। একান্ত আলাপচারিতায় কবিরুল বাশার জানান, এডিসের স্বভাবগত বেশকিছু পরিবর্তন তার গবেষণায় উঠে এসেছে। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছেন এডিস মশার বংশ বিস্তার ও প্রজননের পরিবর্তন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এডিস মশার আচরণগত পরিবর্তন এখন অনেকগুলো। এখন দিনে-রাতে সবসময় কামড়ায়। আগে আমরা বলতাম, পরিষ্কার পানিতে হয়। কিন্তু এখন আমরা নোংরা পানিতেও পাচ্ছি।
এডিসের স্বভাব পরিবর্তনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পাত্রে জমা পানি যদি সে না পায়, তাহলে সে খালে প্রজনন করবে। পাত্রে জমা পানি পেলে, সেখানেই সে গুরুত্ব দেবে।
রাজধানীর যেসব এলাকায় সুইপার প্যাসেজ রয়েছে, সেসব এলাকায় এডিসের উপদ্রব বেশি পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কবিরুল বাশারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বাড়ির মাঝখানের জায়গাটা (প্যাসেজ) পরিষ্কার থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন ধরনের ময়লা ফেলে, বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলা হয়। তাতে বৃষ্টির পানি জমা হয় ও এডিস মশার জন্ম হয়। আমরা এটা বিভিন্ন জায়গা থেকে পেয়েছি।
বিজ্ঞাপন
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কাদের ঝুঁকি বেশি— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কোনো মানুষ দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে তার ঝুঁকি বাড়ে। আরেকটা বিষয় হলো, কোভিড পরবর্তী সময় অনেকে জ্বরকে অবহেলা করে। দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়। যখন পরিস্থিতি খারাপ হয়, তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন ডাক্তাররা আর রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না।
এডিসের জীবাণুর সক্ষমতা বেড়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে এক শব্দে উত্তর দেন এই গবেষক। বলেন, না।
এডিস নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ দিয়ে এই গবেষক বলেন, প্রত্যেকটা বাড়ির মালিক ও তাদের বাসিন্দাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের বাড়ির আশেপাশে ডেঙ্গুর প্রজনন উপযোগী পরিবেশ যেন না থাকে।
সিটি করপোরেশনের করণীয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। উড়ন্ত মশা নিধনের কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা সারা বছর চালাতে হবে। এডিস মশার জন্য আলাদা, কিউলেক্স মশার জন্য আলাদা।
তিনি বলেন, মশক নিধনে সিটি করপোরেশন সকালে লার্ভিসাইডিং এবং বিকালে ফগিং কার্যক্রম করে থাকে। তবে এডিস মশা নিধনে এটি যথেষ্ট নয়।
এই গবেষক বলেন, উৎস ধ্বংস করতে হবে। প্রজনন উপযোগী জায়গা নষ্ট করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
এ কাজটি মৌসুমভিত্তিক না করে সারা বছর করার তাগিদ দেন কবিরুল বাশার।
এরইমধ্যে ৬০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অসংখ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
সামনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার বলেছেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
কারই