শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

চট্টগ্রামে মশার ৪৯১টি প্রজননক্ষেত্র থেকে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

চট্টগ্রামে মশার ৪৯১টি প্রজননক্ষেত্র থেকে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু!
ছবি: সংগৃহীত।

চট্টগ্রামে ৪৯১ মশার প্রজননক্ষেত্র থেকে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে এসব প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫২টি প্রজননস্থল রয়েছে ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে।

শনিবার (৮ জুলাই) সকালে এ তথ্য জানান চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মাহী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মশার প্রজনন এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বিবেচনায় ৪৯১টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে অনাবাদি জমি, নালা ও ঝোঁপঝাড়, ডোবা, খাল, পুকুর-জলাশয় ও পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


প্রজননস্থলগুলোতে কীটনাশক ছিটালে মশার বংশবিস্তার অনেকটা কমে আসবে। বলা যায় প্রজননস্থলেই মশার লার্ভা ধ্বংস করলে মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। এতে শহরের মানুষ কিছুটা হলেও মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চসিকে যোগ দিয়েছি মাত্র কয়েক মাস আগে। দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরের মশার প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করার জন্য নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করি। নিজে মাঠপর্যায়ে জরিপ করে স্থানগুলো চিহ্নিত করি। চিহ্নিত হটস্পট বা যে ঘরে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে তার আশপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ২৫টি, ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে ১৫টি, ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ১৬টি, ৫নং মোহরা ওয়ার্ডে ৫২টি, ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ২৯টি, ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ১৭টি, ৮নং শোলকবহর ওয়ার্ডে ৩০টি, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১৩টি, ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ৬টি প্রজননস্থল পাওয়া গেছে।

১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ১৬টি, ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে ১২টি, ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৩টি, ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডে ৭টি, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ৫টি, ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডে ৯টি, ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৭টি, ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ১৩টি, ২০ নং দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ১২টি।


বিজ্ঞাপন


২১নং জামালখান ওয়ার্ডে ১৪টি, ২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে ৭টি, ২৩নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ৮টি, ২৪নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ২টি, ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডে ১২টি, ২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ১০টি, ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ১২টি, ২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে ১৬টি, ৩০নং পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে ৮টি।

৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডে ৩টি, ৩২নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৪নং পাথরঘাটা ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৫নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৭নং মুনিরনগর ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৮নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ১টি, ৩৯নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে ১৪টি, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ১৬টি এবং ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ৪টি মশার প্রজননস্থল রয়েছে।

dengueতবে ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ড, ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ৩৪নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড এবং ৩৬নং গোসাইলডাঙা ওয়ার্ডে কোনো ব্রিডিং পয়েন্ট বা প্রজননস্থল নেই বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের ভিত্তিতে চিহ্নিত হটস্পটগুলো হচ্ছে— আকবর শাহ হাউজিং, উত্তর কাট্টলী, কর্নেল হাট, বিশ্বকলোনী, বাদামতলী, আলকরণ, কোতোয়ালী, মাদামবিবির হাট, সদরঘাট, পশ্চিম বাকলিয়া, পূর্ব বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, দক্ষিণ খুলশী, পশ্চিম খুলশী, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, উত্তর আগ্রাবাদ, বন্দর টিলা, চান্দগাঁও আবাসিক, নাছিরাবাদ প্রপার্টিজ, মেহেদীবাগ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, এনায়েতবাজার, গোয়ালপাড়া, কালিরহাট, পূর্ব মাদারবাড়ী, পলোগ্রাউন্ড মাঠ সংলগ্ন এলাকা, সরাইপাড়া কাজিরদিঘী, শাপলা আবাসিক এলাকা হালিশহর ঈদগাহ মুন্সিপাড়া, নাজিরপুল কলাবাগান ডবলমুরিং, কৈবল্যাধাম হাউজিং সোসাইটি, বায়েজিদ এলাকা, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, অক্সিজেন, সিটি গেইট এলাকা, ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম কলেজ সংলগ্ন এলাকা, কাঠগড় মাইজপাড়া, বহদ্দারহাট ফরিদের পাড়া খাল ও আশেপাশের এলাকা, খতিববাড়ি খাল, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, হিলভিউ আবাসিক এলাকা, হামজারবাগ কলোনী সংলগ্ন ফরেস্ট একাডেমি, সমবায় আবাসিক এলাকা, পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা ও পূর্ব ষোলশহরের আমিন শ্রমিক কলোনি।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম মহানগরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি স্থান চিহ্নিত করে তা চসিককে অবহিত করেছিল। এরমধ্যে রয়েছে হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডবলমুরিং এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা।

এছাড়া একই বিভাগের পরিচালিত মশা জরিপে দেখা গেছে, নগরে মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে চসিকের উদ্যোগে ২০২১ সালে গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নগরের ৯৯টি স্থান পরিদর্শন করে ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে ৩৩ স্থানে এডিস, ৩৯ স্থানে এনোফিলিস ও ২২ স্থানে এডিস ও এনোফিলিস দুটোই পাওয়া গেছে। তবে ১৮ স্থানে এডিস ও ১২ স্থানে এনোফিলিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৫ স্থানে শতভাগ এডিস ও দুই স্থানে শতভাগ এনোফিলিস পাওয়া গেছে।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ার পর মশক নিধনে জুন মাসে দুই দফা ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করে চসিক। সর্বশেষ ২২ জুন শুরু হওয়া কর্মসূচির ১৫ দিন পেরিয়েছে। এরপরও মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নগরবাসীর অভিযোগ, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধন ছাড়া আর কোথাও এর কার্যক্রম দেখা যায় না। নগরীর কোথায়ও মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই নগরবাসীর কাছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এখন মশার হটস্পটগুলোতেও ওষুধ ছিটানো হবে। মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর