দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু। জ্যামিতিক হারে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অবস্থিত হাসপাতালগুলোকে। দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সিংহভাগই এসব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে অবস্থিত অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। সাধারণ রোগীসহ ওইদিন হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৪৫ জন। এ বাস্তবতায় হাসপাতালটি কেমন সেবা দিতে পারছে? ভবিষ্যতে রোগী আরও বাড়লে তাদের পরিকল্পনা কি? এসব প্রশ্ন নিয়ে ৮ জুলাই মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামানের মুখোমুখী হয় ঢাকা মেইল।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইল: বর্তমানে এই হাসপাতালে কতজন রোগী ভর্তি আছে? নারী পুরুষের অনুপাত কেমন?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ৪৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১১১ জন। এখন পর্যন্ত আটজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে। তাদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। ভর্তি রোগীদের মধ্যে নারী ও পুরুষের অনুপাতা করা হয় না, বয়সভিত্তিক একটা অনুপাত হিসাব করা হয়। আজ পর্যন্ত পূর্ণবয়স্ক রোগী রয়েছে ১৪১ জন, শিশু রয়েছে ৯৫টি।
ঢাকা মেইল: মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এত বেশি রোগী থাকার কারণ কি?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: এটি এলাকাভিত্তিক কারণে। সারাদেশে যত ডেঙ্গু রোগী রয়েছে, তার একটি বড় অংশ এই এলাকা থেকে আসছে। যাতায়াতের সহজলভ্যতা ও তাদের সুবিধার কারণেই সম্ভবত এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি। আমার হাসপাতালটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে দক্ষিণ সিটিতে মানুষ ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইল: শয্যা সংকট ও রোগী ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে কি?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: শয্যা সংকট থাকাটা স্বাভাবিক। এটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। এর বিপরীতে বর্তমানে ১০৪৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। নিয়মিত ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীরা রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের কোনো নিয়মিত ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য তিনটি বিশেষায়িত ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা প্রথমে বেড দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যখন তাতে হচ্ছে না তখন আমরা রোগীদের জন্য ম্যাট্রেসের ব্যবস্থা করছি। রোগী যদি আরও বাড়ে আমাকে সেই কাজটি করতে হবে। এটি একটি বিশেষ ও সাময়িক অবস্থা, একটা সময় তা কেটে যাবে।
ঢাকা মেইল: বারান্দার অবস্থান করার রোগীদের অনেকে মশারি পায়নি। আবার যারা পেয়েছে তারাও ব্যবহার করছে না। কাউন্সিলিংয়ের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: সবার জন্য পর্যাপ্ত মশারি আমাদের কাছে রয়েছে। যারা মশারি পায়নি তাদেরকে আমরা মশারি দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা বলেছে, আমরা মশারি নেব না। আমরা ফ্লোরে এমনিতেই আরামে আছি।
মশারি টানানোর বিষয়ে আমরা রোগীদের প্রতিনিয়ত কাউন্সিলিং করছি। তাদের বারবার মশারি ব্যবহার করার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সরা বলছেন। কিন্তু গরমের কথা বলে তারা তা ব্যবহার করছে না। গরমের কারণে কেউ যদি মশারি না টানায়, আমরা তাদের বোঝাতে পারি কিন্তু জোরপূর্বক মশারি টানিয়ে দিতে পারি না। আমাদের একজন স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসারও রয়েছেন। তিনিও রোগীদের বলছেন।
ঢাকা মেইল: ওয়ার্ডে গরম কমাতে অতিরিক্ত ফ্যান ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া যায় কি?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: হাসপাতালে ফ্যান লাগানোর কিছু নিয়ম রয়েছে। সেটি পরিপূর্ণভাবে মেনেই ফ্যান লাগানো হয়েছে। আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফ্যান দেওয়া আছে। এর থেকে বেশি ফ্যান দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা প্রত্যেকটি লাইনেরই একটি নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি রয়েছে। সক্ষমতার অতিরিক্ত ফ্যান ব্যবহার করলে শর্ট সার্কিট হতে পারে।
এছাড়া হাসপাতালের অবকাঠামোগত সব কাজ পিডব্লিওডি করে থাকে। তারা নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী ফ্যান লাগায়। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আপনি এমন কোনো পয়েন্ট দেখেননি যেখানে ফ্যান নেই বা অকেজো। এর চেয়ে বেশি ফ্যান দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
ঢাকা মেইল: প্লাটিলেট সংকট নাকি শক সিনড্রোম? কোন অবস্থা বেশি জটিল? আপনারা এসব রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: প্লাটিলেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে শক সিনড্রোম নিয়ে। এর কারণে রোগীরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) যাচ্ছে। আমাদের এখানে যে আটজন আছে তারা সবাই শক সিনড্রোমের রোগী। রোগী মৃত্যুর কারণও এই শক সিনড্রোম। রোগীদের বুঝতে হবে প্লাটিলেট দিলেই জাদুর মতো কোনো কাজ হবে না। বরং প্লটিলেটের মাধ্যমে ভাইরাস পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকভাবে স্ক্রিনিং না করা হলে প্লাটিলেটের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ও সি, এমনকি এইচআইভি হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। রোগীদের উচিত হবে প্লাটিলেট নিয়ে চিন্তা না করে চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল হওয়া। প্রয়োজন বোধ করলে চিকিৎসকরাই তাদের পরামর্শ দেবেন। এ নিয়ে চিন্তা করা রোগীর জন্য অহেতুক। বরং এই দুশ্চিন্তা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা রোগীদের এটি বোঝাচ্ছি। তাদের বেশি বেশি করে তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি।
ঢাকা মেইল: সরকারি হাসপাতাল হিসেবে মুগদা মেডিকেলে ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কত?
ডা. নিয়াতুজ্জামান: সরকারি যে রেট রয়েছে, সেটি মেনেই আমাদের এখানে রোগীদের খরচ হচ্ছে। হাসপাতালের লিফটে সরকারি একটি চার্ট টানিয়ে দেওয়া আছে। আমাদের সেটা ফলো করতে হয়। সে অনুযায়ীই আমরা রোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছি। সরকার নির্ধারিত অর্থের থেকে থেকে এক টাকাও বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।
এমএইচ