শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

৪ কারণে যশোরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

৪ কারণে যশোরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

যশোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ জন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ঢাকা-চট্টগ্রামের পর বাইরে যশোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যশোরের চারটি কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। যশোরের চিকিৎসক ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতা, মাঝেমধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়া, যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুবিধা বেশি থাকায় যশোরে রোগীরা ভিড় জমায়। ফলে যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়েছে।

যশোরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় এডিস মশা নিয়ে জরিপ করেছে যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর জরিপে নেতৃত্ব দেন জেলা কীটতত্ত্ববিদ আমিুল হক। যশোর পৌর ও সদর উপজেলা টায়ারের দোকান, পুকুর-জলাশয়, ড্রেন এবং অভয়নগর ও চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি পাশের ডোবা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে জরিপ দল।


বিজ্ঞাপন


জেলা কীটতত্ত্ববিদ আমিনুল হক বলেন, সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে অভয়নগর ও যশোর সদর উপজেলাতে। জরিপে দেখা গেছে, ডাবে খোসা বা ভাঙ্গা চোড়া পাত্রে গায়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, এডিস মশার দুটি প্রজাতি এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রধানত এডিস ইজিপটাইয়ের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। কম হলেও এডিস অ্যালবোপিকটাসও ডেঙ্গু ছড়ায়। গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস বেশি। এডিস ইজিপটাই বেশি শহর এলাকায়। তবে, অভায়নগরে যারা আক্রন্ত হচ্ছে বেশিরভাগ গ্রামের লোকজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১ জুলাই থেকে গত রোববার পর্যন্ত যশোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৮০। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে ৬৬ জন। তবে এদের মধ্যে আক্রান্ত ২৩ জন ঢাকা থেকে আসা। গত ২৪ ঘণ্টায় আকান্ত একজন রোগী ঢাকা থেকে আগত। এর মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ জন। এর মধ্যে ৭ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী রয়েছে। বর্তমানে অভনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন, শার্শা স্বাস্থ্য কর্মপ্লেক্সে একজন ভর্তি রয়েছে। 
 
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.পার্থ প্রিতম চক্রবর্তী বলেন, রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আগামীতে মেডিসিন বিভাগে রেখে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য প্রয়োজন হলে হাসপাতালের রেড জোন ব্যবহার করা হবে। 

মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকার ড্রেনে পানিতে পড়ে থাকা টায়ারের ভেতরে, বাড়ির ফুলের টবে, ফ্রিজের জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম নিচ্ছে। এই মশা যখম মানুষকে কামড় দিচ্ছে তখন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সবার সচেতন হতে হবে।


বিজ্ঞাপন


যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, যশোরের তিন উপজেলার জলাবদ্ধতা রয়েছে। একই সাথে যশোর হচ্ছে যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট। যানবাহন, বিশেষ করে ট্রেন, ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের মাধ্যমে রাজধানীকেন্দ্রিক এডিস মশার যশোরে বিস্তার ঘটেছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন যশোর আসে। সেখানে থাকা ফাঁকা বগিতে মানুষের সঙ্গে এডিস মশাও ট্রান্সফার হতে পারে। ট্রানজিট পয়েন্ট বিধায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি ভারত থেকেও যানবাহন যশোরে আসে। ট্রাকের পেছনের অংশ, যেখানে পানি জমতে পারে এবং গ্যারেজে থাকা পুরোনো টায়ারেও এডিস মশার প্রজনন হয়ে থাকে। ফলে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া যশোরে ভালো চিকিৎসাসুবিধা থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে।

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে আমরা নিয়েছি।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর