মশা নিয়ন্ত্রণে বছর জুড়ে বড় অংকের টাকা ব্যয় করে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন খরচ করেছে ১২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তুলনায় উত্তর সিটি করপোরেশনের ব্যয় প্রায় চার গুণ বেশি। কিন্তু ফলাফল অনেকটাই শূন্য। তাদের ব্যর্থতায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার বিস্তার এখন দেশজুড়ে। ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুগত কারণে ঢাকাকে মশামুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করলে এ ক্ষেত্রে সফলতা মিলবে। প্রাণঘাতি ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যেমনটা সফলতা পেয়েছে কলকাতা।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অনেক দেশেই মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক অবকাঠমো গড়ে উঠেছে যার নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা মাঠপর্যায়ে গবেষণায় মশার বিস্তার রোধে নানা উপায় বের করেন। সবশেষ মাঠে নামে কর্মীবাহিনী। দেওয়া হয় সময়োপযোগী মশা নিধন ওষুধ।
কিন্তু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এমন কোনো ব্যবস্থাই নেই। নেই কোনো কীটতত্ত্ববিদ। জলবায়ুগত কারণে মশার অভ্যাসসহ নানা দিক পরিবর্তন হয়েছে বলা হলেও এ নিয়ে কোনো গবেষণা নেই।
বিজ্ঞাপন
মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ডে কাজ করছে। মশক নিয়ন্ত্রণে ১০৯ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ কোটি ২ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটারের উত্তর সিটিতে মশক নিয়ন্ত্রণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৭০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৮৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১ কোটি টাকা।
মশার বিস্তার ঠেকাতে ভুল পদ্ধতি ফগিং এখনও ব্যবহার করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে গিয়ে মশা মারার আধুনিক পদ্ধতির অভিজ্ঞতা অর্জন করে এসে বলেন, আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ডিএনসিসিতে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও তা আলোর মুখ দেখেনি।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই প্রক্রিয়াতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে। আগামী দুই মাস হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রমও চালাতে হবে।
মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ডে কাজ করছে। মশক নিয়ন্ত্রণে ১০৯ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ কোটি ২ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটারের উত্তর সিটিতে মশক নিয়ন্ত্রণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৭০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৮৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১ কোটি টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে— এ জাতীয় সতর্কবার্তা ছিল, তথাপি রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক। সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছিল না, তা বলাই বাহুল্য। আর যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থিতি বিবেচনায় যে অপ্রতুল কিংবা লোক দেখানো প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তা-ও না বললেই চলে। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার যে সম্ভাবনা ছিল, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি বাস্তবে কতটুকু ছিল, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে মুনাফাভিত্তিক কীটনাশক নির্ভরতার ঊর্ধ্বে গিয়ে দুই সিটি করপোরেশনকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মশক নিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়ানো জরুরি। তা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করাসহ যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে জরুরিভিত্তিতে।
ডিএইচডি