বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

‘৫ আগস্টের আগে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ছিল না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

৫ আগস্টের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুযোগ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।

শনিবার (১৭ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘মেডিকেল রেসপন্স অব বিএসএমএমইউ টু দ্য জুলাই আপরাইজিং: সার্জিক্যাল অ্যান্ড অর্থোপেডিক পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর আহতদের চিকিৎসার দুয়ার খোলে, এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ ব্লক’ অডিটোরিয়ামে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সার্জিক্যাল ও অর্থোপেডিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রদানকৃত চিকিৎসাসেবা নিয়ে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। গণঅভ্যুত্থানে আহত দুই শতাধিক রোগীকে বিএমইউ থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সেমিনারে।

সেমিনারে আলোচকরা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক আঘাত পান এবং গুলিবিদ্ধ হন, যা চিকিৎসাসেবা প্রদানের দৃষ্টিকোণ থেকে এক বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় বিএমইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিএমইউ’র বর্তমান প্রশাসনের সহায়তায় যারা বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও জখম হয় তাদের চিকিৎসায় বিশেষত জেনারেল ও অর্থোপেডিক সার্জন ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞরা আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে কাজ করেন। কাটা ও গুলির আঘাত, রক্তক্ষরণ, হাড় ভেঙে যাওয়া, জয়েন্ট ও স্নায়ু সমস্যা প্রভৃতি চিকিৎসায় তারা বিশেষ অবদান রাখেন। বর্তমানে আহতদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাসেবা প্রদান ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে, এক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছেন বিএমইউর বর্তমান প্রশাসন ও সার্জন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।

অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের হ্যান্ড সার্জন ডিভিশনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, অর্থোপেডিক সার্জাারি বিভাগ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত দুই শতাধিক রোগীকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তার মধ্যে ৬৫ জন রোগীকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব আহতের মধ্যে বুলেট ইঞ্জুরি ২৬, পিলেট ইঞ্জুরি ২১, শারীরিক আঘাত ১৬, মেরুদণ্ডের ব্যাথা ১৫ এবং উপর থেকে পড়ে আঘাত পাওয়া দু’জন রোগী রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও জানান, বিভিন্ন ইউনিটে ৩৯টি মেজর অপারেশন করা হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে পিলেট পাওয়া যায়। যেগুলো বেশি ব্যথার কারণ সেগুলো অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়। বেশিরভাগ অপারেশন নার্ভ ইঞ্জুরির এবং বিভিন্ন ধরনের নার্ভ সার্জারি করা হয়। যেমন: নার্ভ রিপেয়ার, গ্রাফটিং, নিউরোলাইসিস, নার্ভ ট্রান্সফার ও টেনডন ট্রান্সফার অন্যতম। ১৩ জন রোগীর বিভিন্ন ধরনের ভাঙা হাড়ের অপারেশন করা হয়। কিছু অপারেশন ছাড়াও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ডা. আশরাফুল ইসলাম আরও জানান, আহতদের হাঁটুর বুলেট আথ্রোসকপির মাধ্যমে বের করা হয়। মেরুদণ্ডের আঘাত পাওয়া রোগীদের কনজারভেটিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়া রোগীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশিরভাগ রোগীর চিকিৎসায় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলেটেশন বিভাগের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এসব রোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, পেশাগত ও প্রতিষ্ঠানগত দায়বদ্ধতা থেকে আজকের এই সেমিনারের আয়োজন। এই সেমিনারের আয়োজন সময়ের দাবি, জাতীয় দাবি এবং আন্তর্জাতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আহতদের নিয়ে ডকুমেন্টেশন সংরক্ষণ বা দালিলিক প্রমাণ হিসেবে এই সেমিনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছিলেন, ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পূর্বে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তাদের প্রাপ্য সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের সুযোগ ছিল না। তবে সরকার পরিবর্তনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের দুয়ার খুলে যায়। বিএমইউ’র পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুতে বিএমইউ’র অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, জেনারেল সার্জারি বিভাগ ও চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ আহতদের চিকিৎসায় ব্যাপক অবদান রাখে। পরবর্তীতে মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এবং বর্তমানে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আহতদের চিকিৎসা ও পুনবার্সনে কাজ করে যাচ্ছে। বিএমইউ’র বর্তমান প্রশাসন আহতদের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি তাদের পুনবার্সনেও সহায়তা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় বিএমইউ অনন্য সাধারণ অবদান রেখেছে। সার্জিক্যাল ও অর্থোপেডিক সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আহতদের পুনরুদ্ধারে বিরাট অবদান রেখেছে। এর ফলে অনেক আহত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছে। 

সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছার সভাপতিত্বে ও ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেন্ট্রাল সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। সেমিনারে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের হ্যান্ড সার্জন ডিভিশনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম এবং জেনারেল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফারুক ইশতিয়াক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 

এসএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub