- ভুগতে হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক কষ্টে
- সুস্থ হলেও ফলোআপ ও কাউন্সিলিংয়ের পরামর্শ
- স্বাভাবিক জীবনযাপনে পড়তে হয় নানা সমস্যায়
- রোগভীতি কাজ করে অনেকের মধ্যে
কোরবানির ঠিক দুইদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হন দুই সন্তানের জননী শিখা রহমান। প্রথমে সাধারণ ওষুধ ও বাসায় বিশ্রামের মধ্যদিয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন। উন্নতি না হওয়ায় ঈদের আগের দিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেলে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লেও তাকে বাসায় পাঠানো হয় বিশ্রাম ও নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে। কিন্তু বিপদ ঘটে ঈদের দিন। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন শিখা রহমান। স্বজনরা দ্রুত একই হাসপাতালে নেওয়ার পর রক্ত পরীক্ষার পর দেখা যায় প্লাটিলেট নেমে গেছে ৪০ হাজারে। পরে তাকে ভর্তি করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যার পর কিছুটা সুস্থ হওয়ায় পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠানো হয় মগবাজারের এই বাসিন্দাকে। ধীরে ধীরে প্লাটিলেট বেড়ে আড়াই লাখে পৌঁছায়, জ্বরও চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পেলেও শিখা রহমানের শারীরিক ও মানসিক কষ্টের শেষ হয়নি এখনও। বিশেষ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের পেশীর প্রচণ্ড ব্যথা এখনও ভোগাচ্ছে তাকে। অন্যদিকে অস্থিরতা, খাবারের রুচি না থাকার পাশাপাশি এখনও ঘুমের ঘোরে আঁতকে ওঠেন এই নারী। সবমিলিয়ে ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠা এই মানুষটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে যেন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।
ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পাওয়া একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা জানান, ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠলেও স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি মানসিকভাবেও তারা দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের মধ্যে সুস্থ হওয়ার পরও শারীরিক, মানসিক ভীতি কাজ করে। এটা দ্রুত কাটে না। তাই সুস্থ হওয়ার পরও ফলোআপ ও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া থাকে। প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শারীরিক ও মানসিক দুটোই থাকে। বিশেষ করে যাদের আইসিইউ বা এইচডিইউতে যেতে হয় অথবা রক্ত নিতে হয় তাদের মধ্যে যে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করে সেটার প্রভাব পরবর্তীকালেও থাকে।
সুস্থ হওয়ার পর যেসব প্রভাব কাজ করে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, শারীরিক প্রভাবের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর ঝিমঝিম করে, খাবারে অরুচি হয়, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে মানসিকভাবে রোগভীতি কাজ করে। এজন্য সুস্থ হলেও তাদের ফলোআপ এবং কাউন্সিলিং জরুরি।
ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়া শিখা রহমানের স্বামী মাইদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, করোনার সময় পরিবারকে নিরাপদে রাখতে দীর্ঘদিন বাসায় মেহমান আসা বন্ধ রেখেছিলাম। নিজে কাজের জন্য বাইরে বের হলেও স্ত্রী-সন্তানদের বাসায় রেখেছি। কিন্তু এখন স্ত্রীর মধ্যে ডেঙ্গুর যে প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তা কবে পুরোপুরি ঠিক হবে, আদৌ ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে মহাটেনশনে আছি।
এদিকে পুরান ঢাকার বাসিন্দা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোসেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এক সপ্তাহ। ৬ জুন ভর্তি হয়ে ১২ জুন ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফেরেন এই তরুণ শিক্ষার্থী।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ও পরবর্তী কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, যখন আক্রান্ত ছিলাম তখন জ্বর ১০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। সর্বাঙ্গে বিশেষত মাথা, হাড়ে ও পায়ের পেশীতে তীব্র যন্ত্রণা ছিল। এসব উপসর্গের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের।
সুস্থ হওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার কথা জানিয়ে শাহাদাৎ বলেন, ডেঙ্গুর সময় রুচির তারতম্য হয়েছিল। সব পছন্দের খাবার অরুচির তালিকায় চলে যায়। এখনও তা অনেকটা রয়ে গেছে। শারীরিক দুর্বলতা কবে কাটবে সেই টেনশনে আছি।
অন্যদিকে দুই বছর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া রাজধানীর মনিপুর স্কুলের শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ডেঙ্গুর সময় যেসব কষ্টে ছিলাম এখনও মাঝেমধ্যে একই রকম শারীরিক কষ্ট অনুভব করি। বিশেষ করে শরীরের সব জয়েন্ট প্রচণ্ড ব্যথা করে। পিঠ, কোমর ভেঙে আসে। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠতে গেলে সময় নিতে হয়। এসব চিন্তা করে মন ভালো আসলেই রাখা কঠিন।
বিইউ