রাজধানীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৭টি ওয়ার্ড মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। দক্ষিণ সিটির ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকাগুলোর মধ্যে মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর, বাসাবো, খিলগাঁও, গোড়ান এলাকার চিত্র ভয়াবহ। অথচ এসব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহে এক-দুইদিন ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করতে আসে সিটি করপোরেশনের লোকজন। কোনো কোনো তাও দেখা যায় না। মশার বিচরণ বেশি অলিগলি ও ঘিঞ্জি এলাকায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হয় প্রধান সড়কগুলোতে।
শনিবার মুগদা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে ভরা। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে। মুগদা মেডিকেল থেকে বড় মসজিদ যাওয়ার সড়কে জমে আছে পানি। এই এলাকার আরব বেকারির গলিতে গিয়ে দেখা যায়— সবদিকেই ময়লা আবর্জনা। এই এলাকার বাসিন্দা এখলাস বলেন, রাইতে তো মশা আছেই, দিনের বেলাতেও মশা কামড়ায়। অহন তো সব জায়গায় শুনতেছি ডেঙ্গু আর ডেঙ্গু। সবসময় ভয়ে থাকি। সিটি কর্পোরেশনের লোকজন মাঝেমধ্যে ধোয়া দিয়া যায়। তাও অলিগলিতে আসে না। ওইদিক দিয়াই চইলা যায়। এই ধোয়া দিয়া কোনো লাভ হয় বলে মনে হয় না।
বিজ্ঞাপন
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা সাইদুর বলেন, একটু বৃষ্টি হইলেই এই এলাকায় পানি জমে। এই এলাকা সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। এজন্য বেশি মশা থাকে। মুগদা ঝিলপাড় এলাকার এক দোকানদার বলেন, দিনের বেলা দোকানে বসলেও মশা কামড়ায়। রাতে তো কয়েল দিয়াও কাজ হয় না।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ভাট্টির সাথে মোবাইল ফোনে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মশার উপদ্রবের কথা জানালেন মায়াকানন, সবুজবাগ, বাসাবো এলাকার বাসিন্দারাও। তারা বলছেন, মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট ছাড়াও মশারি টানিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের মশা নিধন অভিযান খুব একটা দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। মায়াকানন এলাকার বাসিদা ফারুক বলেন, সিটি কর্পোরেশনের লোকজন মাঝেমধ্যে আসে। যেই ধোয়া স্প্রে করে যায় তাতে মনে হয় না মশা কমে। আমার তো মনে হয় ধোয়া দিলে বাইরের মশাগুলাও বাসা-বাড়িতে ঢুকে যায়।
বিজ্ঞাপন
তবে এই এলাকার (৫নং ওয়ার্ড) কাউন্সিলরের দাবি— অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই এলাকায় মশার উৎপাত কম। কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস ঢাকা মেইলকে বলেন, অন্যান্য এলাকার চেয়ে আমার এলাকা মশার তৎপরতা কিছুটা কম। তারপরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছি। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং, সভা-সেমিনার করে যাচ্ছি। নিয়মিত সকালে কীটনাশক ও বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করছি। এছাড়া যেসব নতুন বিল্ডিং করছে সেগুলোতে গিয়ে দেখছি কোথাও পানি জমে আছে কিনা। সবদিক থেকেই আমাদের কার্যক্রম চলছে।
টিএই