বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

দিনভর নজরদারিতে ইসির জালে দুই ‘ভোট ডাকাত’!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

দিনভর নজরদারিতে ইসির জালে দুই ‘ভোট ডাকাত’!

নির্বাচনের সময় কেন্দ্রের গোপন বুথে ঢুকে জোরপূর্বক ভোট দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভোটারের পছন্দের প্রার্থীর বাইরে অন্যকে ভোট দেওয়ার সময় বেআইনিভাবে গোপন জায়গায় ঢুকে পড়ার ঘটনাও অহরহ। নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিবের খানের ভাষায় যারা ভোট ডাকাত।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনের পর এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ‘ভোট ডাকাত’ ধরতে প্রত্যক কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে কমিশন।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিনভর কমিশন সচিবালয়ে বসে ক্যামেরা মনিটরিং করে মাত্র দুজন অনিয়মকারী পেয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে পুরো কমিশন।

যাদের একজনকে দিনভর আটকে রেখে বিকেলে মুক্তি দেওয়া হয়। আরেকজনকে তিনদিনের সাজা দেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট।

যদিও মেয়রপদের প্রার্থী জায়দা খাতুনের অনেক এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, ঢুকলেও বের করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। কিছু কেন্দ্রে মৃদু সংঘর্ষ, হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। 

অবশ্য ইসির দাবি, তাদের নজরে তেমন কোনো কিছু পড়েনি। যখনই কিছু নজরে এসেছে তখনই তারা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট দেখার পর গোপন জায়গায় প্রবেশ করার বিষয়টি চোখে পড়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের। তারা বিষয়টি দেখার পর দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর একজনকে আটক এবং অন্যজনকে তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশ পেয়ে গাজীপুর সিটির ১০১ নম্বর সোনারবান মেমোরিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ এবং গাজীপুর সিটির বি ব্লকের ১০৩ নম্বর উম্মুল কুরা হিফজ মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে মো. আবু তাহেরকে আটক করা হয়।  

গাজীপুর সিটির নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের একজনকে বিকেলে ছেড়ে দেওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর অপরজনের তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েছে।

gazipur

জানা গেছে, নির্বাচনে সালনার নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের প্রবেশমুখে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলে।

ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের কাছে সুনির্দিষ্ট করে একটি কেন্দ্রে অনিয়মের কথা বলা হলে তাদের জানা নেই বলে দাবি করেন।

উল্টো তিনি বলেন, একসঙ্গে চার হাজারের মতো ক্যামেরায় চোখ রাখা অসম্ভব। আমরা যখন যা দেখতে পেয়েছি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। তবুও আমরা অনিয়মকারীদের ধরার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি৷ হয়তো অপরাধীরা ভয়ে এসব করছে না। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।

নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম।

দিনভর যা হলো ইসিতে

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। যা ঢাকায় বসে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হবে। 

সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য চার কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চার তলায় মনিটরিং রুমে বসে ক্যামেরায় নজর রাখেন।

ec

এরআগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার থাকলেও এবার সেভাবে সাংবাদিকরা মনিটরিং সেলে ঢুকতে পারেননি। তাদের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। 

শুরুর পর থেকে দুই ঘণ্টা পর পর আপডেট জানানো হয় সাংবাদিকদের৷ অবশ্য পুরো দিনে দুটি কেন্দ্রের বুথের গোপনকক্ষে অযাচিত প্রবেশের চেষ্টা দেখে ফেলে এবং ভোটারদের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা নজরে আসে ইসির।

গাজীপুরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তারা ফোন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে কমিশন। পরে দুজনকে আটক করে সাজা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়া ভোট চলার মাঝে কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয় কিছু বলেনি ইসি। 

ভোটগ্রহণের নির্ধারিত সময় বিকেল চারটার পরও লম্বা সময় চলে ভোট। তখনও ৫০টির বেশি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়। 

পরে পাঁচটার দিকে সিইসি ছাড়া বাকি কমিশনাররা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসেন। সেখানে সাবেক ইসি সচিব মো. আলমগীর ভোট নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর