বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অবশেষে জাহাঙ্গীরের স্বপ্ন পূরণ

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৩, ০২:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

অবশেষে জাহাঙ্গীরের স্বপ্ন পূরণ
ছবি: সংগৃহীত।

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরের নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। মনোনয়ন ফরম কিনলেও যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচনি মাঠ থেকে ছিটকে পড়েন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা। পরে অবশ্য প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলও করেছিলেন, তবে ফল পাননি।

শেষমেশ ‘কোমর বেঁধে’ নেমে পড়েন নির্বাচনে মেয়র পদে পৃথকভাবে মনোনয়ন কেনা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে জেতাতে। পরে সিটি নির্বাচনকে নিজের অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে নিয়ে মা জায়েদা খাতুনকে জয়ী করতে চালান জোর প্রচারণাও। শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।


বিজ্ঞাপন


Electionবৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাজীপুর সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে কোনোপ্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। পরে ভোট গণনা শেষে রাত দেড়টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।

ফলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়ে জয় পান জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন। টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীরের মা পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।

এর আগে ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে শর্তসাপেক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরকে দলে ফেরানো হয়।

Electionকিন্তু সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন জাহাঙ্গীর। সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে বেছে নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পরে দলের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কেনেন। পাশাপাশি মা জায়েদা খাতুনের নামেও পৃথকভাবে মনোনয়ন ফরম নেন তিনি। তবে ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ার কারণে গত ৩০ এপ্রিল জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। অবশ্য একই দিনে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।


বিজ্ঞাপন


পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন জাহাঙ্গীর। সবশেষ গত ৪ মে জাহাঙ্গীরের আপিল খারিজ করে দেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম। এতে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই বহাল রয়ে যায়। এরপর ৭ মে প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পরদিন ৮ মে বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রিট আবেদনও খারিজ করে দেন।

Electionপরবর্তীতে প্রার্থিতা বাতিলের পর জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কাজ করতে বলা হয়। তবে এটি না করে ‘বিদ্রোহী’ হন জাহাঙ্গীর। ওই সময় তার এমন অবস্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও নানা হুঁশিয়ারি দেন। একপর্যায়ে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

এতসবের মাঝে নিজের প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাজীপুরের অলিগলিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর। নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে গিয়ে বেশ কয়েকবার মা-ছেলে হামলার শিকারও হয়েছেন বলেও অভিযোগ ছিল সাবেক এই মেয়রের।

জাহাঙ্গীর সমর্থকদের দাবি ছিল- গত ১৯ মে টঙ্গী পূর্ব থানার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গোপালপুর এলাকায় জায়েদা খাতুনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় প্রার্থী জায়েদা খাতুন, তার ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং তার ক্যামেরাম্যান সুলতানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

Electionএছাড়াও পরদিন ২০ মে টঙ্গীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের গরুর হাট রোডে প্রচারণা চালাতে গিয়েছিলেন জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময়ও তাদের ওপর হামলা হয়। দ্বিতীয়বারের এই হামলায় মজিবর ও আশরাফ নামে জাহাঙ্গীরের দুই সমর্থক আহত হয়েছিলেন। আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম গাড়ি থাকায় হামলা থেকে বেঁচে যান।

যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি কার হয়েছিল তারা এমন কোনো অভিযোগ পাননি। তবে বারবার হামলার পরও থেমে ছিল না জাহাঙ্গীরের প্রচারণা। কখনো মাকে নিয়ে ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, আবার কখনো একা একা ভোটারদের কাছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চেয়েছিলেন। সবমিলিয়ে ভোটারদের কাছেও নন্দিত হয়ে উঠেন সাবেক এই মেয়র। ফলশ্রুতিতে ছিনিয়ে আনলেন মায়ের বিজয় ও ‘নিজের অস্তিত্ব’।

বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পর গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, জাহাঙ্গীরের অনেক জনপ্রিয়তা আছে। ওই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তার মাকে বিজয়ী করেছেন।

Electionতবে শুধু মেহেদী হাসানই নয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বেশিভাগ বাসিন্দাই এমন ভাষ্য। তারা বলছেন, গাজীপুরে দৃশ্যত আজমত উল্লা ও জায়েদা খাতুনের লড়াই হলেও মূলত আজমত উল্লার সঙ্গে লড়াই করেছেন জাহাঙ্গীর। শেষমেশ এই লড়াইয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শেষ হাসি হেসেছেন জাহাঙ্গীর।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর বঙ্গতাজ পৌর অডিটোরিয়ামে ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। পরে বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়েন জাহাঙ্গীর সমর্থকরা।

এদিকে, ফল ঘোষণার পরপরই গণমাধ্যম কর্মীদের তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। সাবেক এই মেয়র বলেন, নির্বাচনে নৌকার বিজয় হয়েছে, ব্যক্তি হেরেছে। কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না, তবে নৌকার বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিতেছি।

Electionনৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লাকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উনি সিনিয়র মানুষ, আমরা উনার কাছে যাব। পরামর্শ নেব। গাজীপুরের সবাই আমরা ভাই ভাই। আমি সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ভুল করে থাকলে আমাকে মাফ করে দেবেন। আমার মা বলেছেন সবাইকে নিয়ে গাজীপুরের উন্নয়ন করবেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের গার্ডিয়েন। আমি সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

কেআর/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর