পরীক্ষা শুরুর আগে নিজেদের ভিন্ন আঙিনায় তুলে ধরতে বিলবোর্ড টাঙিয়ে দোয়া চেয়েছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার ৫ এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিলবোর্ড টাঙিয়ে আলোচনা-সমালোচনা মুখে পড়লেও ফলাফলে দেখিয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
দোয়া চাওয়া দশিক্ষার্থীরা হলেন— বেড়া উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের কাবাসকান্দা গ্রামের ইফতেখার উদ্দিন আহমেদের ছেলে সুহায়িব আহমেদ সাহেদ, একই ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামের মোহন মোল্লার ছেলে নাহিদ হাসান, আহম্মেদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের খন্দকার শহিদুল্লার ছেলে সামী খন্দকার ও একইগ্রামের খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে খন্দকার মাশরাফী। সবাই উপজেলার কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিলবোর্ড টাঙিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলেন তারা। এনিয়ে অনেকেই সেই সময় সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু তাদের এমন সাফল্যে এখন সবাই প্রশংসা করছেন। এতে খুঁশি শিক্ষার্থীরাও। তারা বলেন, ‘এটা নিয়ে যখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে তখন আমাদের অনেকেই নিন্দা করে যে, তারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এইসব করছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাসী ছিলাম যে, ভালো কিছু করবো। এখন আমরা অত্যন্ত খুশি।’
সুহায়িব আহমেদ সাহেদ ও নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের মা-বাবাও অনেক খুশি। যারা সেই সময় গালমন্দ করেছিলেন তারাও খোঁজখবর নিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। এটা অবশ্যই ভালো লাগছে। তবে সবাই যদি জিপিএ-৫ পেতাম তাহলে আরও ভালো লাগতো।’
সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘তাদের বিল বোর্ড দেখে অনেকেই সমালোচনা করলেও সেই সময়ই আমরা বিষয়টি ইতিবাচক ও সৃজনশীলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখেছিলাম। আজকে তারা সেটি প্রমাণও করেছেন। শুধু তারা নয়, আমার স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২৬ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৫ জন, এজন্য আমরা খুবই আনন্দিত।’
বিজ্ঞাপন
ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনার বেড়া উপজেলার ব্যস্ততম কাশিনাথপুর মোড়ে অবস্থিত কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুল। এই স্কুলেরই বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর সবার বয়স ১৬ বছর। সহপাঠীর পাশাপাশি পরস্পরের খুব ভাল বন্ধু তারা। সপ্তম শ্রেণী থেকে এই স্কুলে পড়াশোনা করছেন।
বিলবোর্ড টাঙানোর উদ্দেশ্য নিয়ে সামী খন্দকার বলেন, ‘আসলে এটি নিয়ে আমাদের তেমন পরিকল্পনাই ছিল না। আমরা সবাই ভালো বন্ধু, এক সঙ্গে চলাচল করি। পরীক্ষার আগে গত জুন মাসে স্থানীয় একটি একটা প্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচ বন্ধু কথা বলছিলাম। সেখানে একটি ডিজিটাল বিলবোর্ড দেখে মাথায় আসে এরকম একটা বিলবোর্ড আমরা বানাতে পারি কি না। তখন নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেই বিলবোর্ড বানানোর।’
খন্দকার মাশরাফী বলেন, ‘এটি তৈরি করতে খরচ হয় মাত্র এক হাজার টাকা। পরদিন ৫ জুন কাশিনাথপুর মোড়ে পুলিশ বক্সের পাশে, ফুলবাগান চত্বরে ও বিজ্ঞান স্কুলের সামনে এই তিন জায়গায় তিনটা ব্যানার টাঙিয়ে দেই। আমরা কেউ ফেসবুকে বিলবোর্ডের কোনো ছবি পোস্ট করি নাই। কাশিনাথপুর মোড়ে পুলিশ বক্সের পাশে টাঙানো বিলবোর্ডের ছবি কেউ একজন ফেসবুকে শেয়ার করলে ভাইরাল হওয়ার পর আমাদের নজরে আসে।’
টিবি