২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এরমধ্যে নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালুর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নার্সিং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (২ জুন) বেলা ৩টার দিকে জাতির উদ্দেশে বাজেট পেশকালে এসব তথ্য জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বিজ্ঞাপন
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে সকল নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে সেবার পরিধি বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের শূন্যপদ পূরণে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত চার হাজার ১৬৬ কোটি টাকা এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নত দেশসমূহের চাহিদা অনুযায়ী কেয়ারগিভার খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব হলে একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হবে এবং একইসঙ্গে প্রবাসী আয় অর্জনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এই লক্ষ্যে কেয়ারগিভারদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি নার্স শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।’
এছাড়া রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, দেশীয় শিল্পের বিকাশ এবং জনস্বার্থে রেফারেল হাসপাতালের পাশাপাশি ৫০ শয্যার অধিক হাসপাতাল স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। আর হাসপাতাল বেড উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদয় ভ্যাট ৩০ জুন ২০৩০ পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করে কাস্টমস আইন-২০২৩ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাতেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি জানান, যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, পরিবেশ উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আওতায় জনগণকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন শহরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও প্রাথমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে মোট পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এতে করে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট দাঁড়াবে। ঘাটতি পূরণে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নির্বাহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৫ সালের পর অদ্যাবধি কোনো বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এবারের বাজেটে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগত যে সকল সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সুবিধা ভোগ এবং যে সকল চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’
এসএইচ/এফএ