বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে যেসব বিষয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ জুন ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে যেসব বিষয়

নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এই বাজেট পেশ করছেন। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম। নির্বাচিত সরকার না থাকায় বাজেটটি আজ সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভির মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমেছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন জাতীয় বাজেটে ১০টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে সাড়ে ছয় শতাংশ। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাংশ।

আসন্ন বাজেটে উচ্চাভিলাষী কোনো লক্ষ্যমাত্রা থাকবে না। এবার উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ও রাজস্ব বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

রাজস্ব নীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাজেটে সংস্কার কমিশন ও টাস্কফোর্স রিপোর্টের সুপারিশগুলো প্রতিফলিত হবে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সহায়তা পেতে বাজেট ঘাটতি কমানো, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

রাজস্ব বাজেটের ৫৭ শতাংশ বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। শুধু ভাতা ও বেতন বাবদ ৮২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা চালু হতে পারে। এটি সরকারের খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।


বিজ্ঞাপন


বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করেছে। রাজস্ব বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ থাকবে। সরকার পর্যায়ক্রমে এর পরিমাণ কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে।

রাজস্ব চাপ কমাতে সরকার বিদেশি ঋণের ওপর বেশি ঝুঁকবে। বিশেষ করে, বাজেট সহায়তার জন্য। বিদেশি ঋণ পরিশোধে ২০ থেকে ৩০ বছর সময় পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যায় পাঁচ বছর।

রাজস্ব আয় কম হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষায় খরচ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। তবুও, এই খাতগুলো সরকারের ১০ অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। বাজেটে কম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ভর্তুকিসহ মূল সামাজিক কর্মসূচিগুলো কিছুটা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।

সরকারের ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় পাবে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট খরচের প্রায় ৩৮ শতাংশ। এ খরচের সবচেয়ে বড় বরাদ্দ যাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে। এর আগে তালিকার শীর্ষে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগে এ বছর বরাদ্দ কমবে।

প্রতিরক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, বিদ্যুৎ এবং সামাজিক কল্যাণে বরাদ্দ সামান্য কমতে পারে। স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জননিরাপত্তায় বরাদ্দ সামান্য বাড়তে পারে। কৃষি ও সড়ক পরিবহনে বরাদ্দ আগের মতো থাকার সম্ভাবনা আছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তিন দশমিক ৯৫ শতাংশ ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

রাজস্ব বাড়াতে সরকার কর সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে আছে ১৫ শতাংশ অভিন্ন ভ্যাট হার চালু করা ও কর রিটার্ন দাখিলের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশলও নেওয়া হচ্ছে।

বাজেটে প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে ভ্যাট নিবন্ধনের নিয়ম কঠোর করা। করের পরিধি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগে এই সীমা ছিল তিন কোটি টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ ও এফডিআই সুবিন্যস্তকরণ, সম্পূর্ণ আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক ও দেশীয় অনিশ্চয়তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করার মতো কঠিন কাজও রয়েছে।

টিএই/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর