বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বড় বাধা খেলাপি ঋণ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

জনজীবনে চাপ কমাতে খাদ্য নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ল ১ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা

দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। অনাদায়ি বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, যা কিছু ব্যাংককে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। একইসাথে, চলমান তারল্য সংকট ব্যাংকিং খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রমকেও বিঘ্নিত করছে। এসব কারণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে জোরালো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিবৃতি ২০২৫-২৬ থেকে ২০২৭-২৮ এ উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক খাতের এই দুর্বলতা দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনাদায়ি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি, এবং ঋণ পুনঃতফসিলের অনিয়ম অন্যতম কারণ। অনেক ব্যাংক বারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নতুন করে ঝুঁকিতে পড়ছে।


বিজ্ঞাপন


এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতি সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার, ঋণ পরিশোধে কঠোরতা, ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালায় স্বচ্ছতা, এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের মতো কাঠামোগত সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে কিছু সংকটাপন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। একইসাথে ব্যাংকিং কমিশন গঠন, ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নিশ্চিত না হলে আর্থিক খাত আরও বড় সংকটে পড়তে পারে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে সাতটি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে সরকার। প্রথমত, মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার দেশের অর্থনীতির জন্য অন্যতম বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি এক দশকে সর্বোচ্চ ১১.৭ শতাংশে পৌঁছায়, যদিও তা ২০২৫ সালের মার্চে কমে ৯.৪ শতাংশে নেমে আসে। তবে মুদ্রানীতির কড়াকড়ি ও রাজস্ব নীতির সমন্বয় সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, যা জনজীবন ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানিতে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় রপ্তানিকারকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হলো রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতের নিম্নহার। চতুর্থত, কড়াকড়ি আরোপিত মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির কারণে উচ্চ সুদের হার এবং বিনিয়োগের ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যদি মূল্যস্ফীতি কমে না আসে, তবে বেসরকারি বিনিয়োগ ও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে এবং এর ফলে বেকারত্ব বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হিসেবে আর্থিক খাতের দুর্বলতাকে সামনে এনেছে সরকার। অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, কিছু ব্যাংকের দেউলিয়াত্বের ঝুঁকি এবং তারল্য সংকট ব্যাংক খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। ষষ্ঠত, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারাতে হবে। ফলে রপ্তানি প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা এবং বহুমুখীকরণ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।


বিজ্ঞাপন


একইসাথে, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ ও জলবায়ু তহবিল পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে, যা অর্থনীতিকে নতুন চাপে ফেলবে। সপ্তম এবং শেষ চ্যালেঞ্জটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ওয়ার্ল্ড রিস্ক ইনডেক্স ২০২৪ অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের নবম সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর