সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতাতে টানা পাঁচ দিন ধরে রংপুর চষে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের নেতৃত্বে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক এবং ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত নন্দী জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয় নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের গণসংযোগ কিংবা মিটিং মিছিলে বাধ্যবাধকতা থাকায় তারা না এলেও পাঁচ দিন ধরে রংপুরে অবস্থান করছেন কেন্দ্রীয় এই তিন নেতা। নির্বাচনের শুরুর দিকে অগোছালো এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী স্থানীয় আওয়ামী লীগের মান-অভিমান থাকলেও এখন সবাই মাঠে নেমেছেন নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার পক্ষে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর অলিগলি এবং বর্ধিত ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লায় শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উন্নয়নের মার্কা নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিদিনই উঠান বৈঠক, গণসংযোগ করে নগরবাসীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। আর এতেই অগোছালো নৌকার ভোটের পরিবেশ যেমন গোছালো হয়ে আসছে তেমনি ভোটের মাঠে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিজ্ঞাপন
রংপুর সিটির বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এই ওয়ার্ডগুলো যুক্ত হলেও সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে নৌকায় ভেড়াতে সমর্থ্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
১১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তৈয়বুর রহমান জানান, আগে ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল ওয়ার্ডটি। সিটির মধ্যে যুক্ত হওয়ায় সবাই আশায় বুক বেঁধেছিল এবার উন্নয়ন হবে। কিন্তু ১০ বছর পার হলেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং অনেক সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওয়ার্ডের গরিব-দুঃখী মানুষগুলো।
১২ ওয়ার্ডের আবুল কাশেম জানান, ইউনিয়নে থাকতে কাদামাটির রাস্তায় চলাচল করা লাগতো, সিটি হওয়ার পরও একই অবস্থা। উন্নয়ন না হলেও কিছু মানুষের উন্নয়ন হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন জানান, উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের উন্নয়নে কাজ করলেও রংপুরবাসী বারবার ভুল করে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেন এবং জনপ্রতিনিধি বানান। এবার তারা আর ভুল করবেন না, উন্নয়নের স্বার্থেই নৌকাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সিটি মেয়র উপহার দেবেন। নগরবাসী জেগেছে, বিপুল ভোটে নৌকাকে জেতাবে তারা।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে বিজয়ী করতে রংপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। সবাই মাঠে দিনরাত কাজ করছেন। ইনশআল্লাহ ২৭ ডিসেম্বর নৌকা জিতবে।
নৌকার মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই নৌকার অনুকূলে আসছে ভোটের পরিবেশ। বর্ধিত ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আর অন্য মার্কার কথা শুনতে চায় না, তারা মুখিয়ে আছেন নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য। সব ঠিকঠাক থাকলে নগরবাসী এবার বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয় উপহার দেবে।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে রংপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করে। প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হলেও ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নির্বাচিত হন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। ভোটের লড়াইয়ে নয়জন থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা ও লাঙ্গলের মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি/জেবি











































