রংপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেছেন, ‘গাইবান্ধার মতো কোনো সমস্যা দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে রংপুরের নির্বাচনও বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা গাইবান্ধা নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। রংপুরে সমস্যা হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন ইসি রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ৮৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ছিল। কিন্তু ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
এরপর এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের করা তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশের উপ-পরিদর্শক, নির্বাহী হাকিমসহ শতাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনী এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রংপুর সিটির তৃতীয় ভোটগ্রহণ শুরু হবে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এখানকার ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, রংপুরের নির্বাচনে আমরা ৮৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে এই কেন্দ্রগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ করব। গাইবান্ধার মতো কোনো সমস্যা দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
ইসি রাশেদা বলেন, সবাই মিলে নির্বাচন করতে হবে। প্রার্থীদের আচরণ হবে বিধিমালা অনুযায়ী। আমাদের লোকবল খুব বেশি নেই, তবুও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করব।
জাতীয় নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সিসি ক্যামেরার ব্যবহার আরপিও-তে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) নেই। তবুও জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৫টি আসনের নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে না বলেও জানান এই কমিশনার।
রাশেদা সুলতানা বলেন, বাজেট ঘাটতির জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা যাবে না। কারণ এটি হঠাৎ করে হয়েছে। এজন্য আমাদের বাজেট ছিল না। তবে আমরা কিন্তু বলছি না যে একবারেই ব্যবহার করব না। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে করব।’
গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির সংরক্ষিত আসনের একজনসহ মোট ছয়জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। পরে হারুনুর রশীদও পদত্যাগ করেন। ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমে পদত্যাগ করা ৫ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হারুনুর রশীদের ছেড়ে দেওয়া আসনে কবে ভোট হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সংরক্ষিত আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এই নির্বাচনের পরে নেবে নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া রংপুর সিটি নির্বাচনে মোট ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছে ১ জন। নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ২২৯ জন এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকবেন ১ হাজার ৩৪৯ জন। মোট পোলিং অফিসার থাকবেন ২ হাজার ৬৯৮ জন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ আরও ৫ রাজনৈতিক দলের মনোনীত ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৯ জন মেয়র পদে লড়বেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩২ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন এবং ৩৩ ওয়ার্ডের ১১ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৬৮ জন। ৩৩টি ওয়ার্ডের ২২৯ কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৯টি।
বিইউ/এমআর











































