শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

ক্যানসার চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রুমা, চান সহায়তা

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম

শেয়ার করুন:

ক্যানসার চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রুমা, চান সহায়তা
চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন রুমা আক্তার। ছবি: ঢাকা মেইল

তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেখানে স্বপ্ন বুনার কথা, সেখানে মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি গৃহবধূ। স্বামীও অকালে মৃত্যুবরণ করায় চরম অসহায়ত্বের শিকার তিনি। পরিবারের দায়িত্ব ও নিজের চিকিৎসা খরচ নিয়ে এখন নির্মম বাস্তবতায় পড়ে আছেন অকূল পাথারে। একদিকে নিজের চিকিৎসার খরচ মেলানো, অন্যদিকে ১৪ বছরের মাজিয়া, ১২ বছরের রবিউল ও আট বছর বয়সের শাকিবদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাসকে সঙ্গী করে দিন কাটছে গৃহবধূর। একটুখানি সাহায্যের আশায় তিনি চেয়ে আছেন দয়াবান-বিত্তবানদের দিকে।

বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের গৃহবধূ রুমা আক্তারের (৩৫) কথা। তিনি একই গ্রামের শাহ আলমের স্ত্রী। ২০২০ সালে তার একটি ব্রেস্টে টিউমার ধরা পড়ে। পরবর্তী সময়ে তা ক্যানসারে রূপ নেয়। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজে টিউমার অপারেশন করলেও মুক্তি পাননি ক্যানসার থেকে। এর মাঝেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হন স্বামী শাহ আলম। তিনিও স্ত্রী-সন্তানের কথা ভেবে নিজের চিকিৎসার পেছনে মানুষের দান-দক্ষিণায় পাওয়া অর্থ ব্যয় করেননি। ২০২০ সালে পরিবারকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিত্যদিনের অভাব অনটনকে সঙ্গী করে চললেও স্বামীর মৃত্যুতে যেন আর কোনো কূলই রইল না রুমার। আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ২০২৩ সালে ঢাকার মুগদা মেডিকেলে যোগাযোগ করেন রুমা। ডাক্তারের পরামর্শে জীবন বাঁচাতে ডান পাশের ব্রেস্ট কেটে ফেলেন। এতেও নিস্তার মেলেনি মরণঘাতী ক্যানসার থেকে। ক্যানসারের টিস্যু ছড়িয়ে পড়ে অপর ব্রেস্টেও। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ- বাঁচতে হলে নিয়মিত কেমু ও রেডিয়েশন থেরাপি নিতে হবে।


বিজ্ঞাপন


হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান গৃহবধূ রুমা আক্তারের ভিটে বাড়ি ছাড়া তো আর কিছুই নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সন্তানের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতেন। এখন শারীরিক অসুস্থতায় কাজ করাও বন্ধ। ঘরে তিন বেলা খাবারও জুটছে না। কীভাবে করবেন চিকিৎসা? কিংবা সন্তানদেরই বা কী হবে?

গৃহবধূ রুমার একমাত্র আশ্রয়স্থল বৃদ্ধা মা হামিদা বেগমও মেয়ে ও নাতনি-নাতিদের চিন্তায় আরও হতবিহ্বল। কেমন করে কাটাবেন এমন বিপদ- এই আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ। ডাক্তার তো বলে দিয়েছেন, কেমু ও রেডিয়েশন থেরাপিই একমাত্র শেষ চিকিৎসা। এগুলো নিয়মিত করতে না পারলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হবে। মেয়ের জীবন-মৃত্যুর শঙ্কা, নাতনি-নাতিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা বৃদ্ধা হামিদা বেগমকে ঠেলে দিচ্ছে গভীর উদ্বেগে।

এলাকাবাসী জানায়, হতদরিদ্র শাহ আলম কিডনি রোগে আক্রান্ত হলেও সন্তানদের কথা ভেবে তিনি স্ত্রীর চিকিৎসাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে নিজের জন্য না করে যতটুকু সম্ভব স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন। শাহ আলমের মৃত্যুর পর এলাকাবাসী বিভিন্নভাবে সহায়তা তুলে গৃহবধূ রুমার পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন রুমা ক্যানসার যে স্টেজে আছে সেখানে তো আরও টাকা প্রয়োজন। রুমা চলে গেলে তার সন্তানরাও একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় দেশের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।

B-Baria-2


বিজ্ঞাপন


ক্যানসার রোগে আক্রান্ত রুমা আক্তার বলেন, কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী চলে গেছেন। আমার চিকিৎসাও আটকে আছে। অনেকভাবে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এ পর্যন্ত দুটো অপারেশন করিয়েছি। কিন্তু কেমু-রেডিয়েশনের খরচ চালানোর কোনো পথ দেখছি না। ডাক্তার বলেছেন কেমু ও রেডিয়েশন থেরাপি না নিতে পারলে আমার বাঁচা সম্ভব হবে না। দয়াবান কেউ তিন অনাথ-অসহায় শিশুদের দিকে তাকিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ালে আমার চিকিৎসার পাশাপাশি তিনটি অবুঝ শিশুও হয়ত অনিশ্চিত জীবন থেকে রক্ষা পাবে। আমি মারা গেলে আমার সন্তানদের কে দেখবে? তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা চান।

রুমার মা হামিদা বেগম বলেন, মেয়ে রুমার বিয়ের ১৫ বছর পর তার স্বামী মারা গেছে, চিকিৎসা করতে পারছি না টাকার অভাবে। মেয়ে অসুস্থ হলেও কোনোমতে কিছু চিকিৎসা করিয়েছি। তিন অবুঝ ছোট্ট নাতনি-নাতি ও অসুস্থ মেয়ে নিয়ে খুবই অসুবিধায় পড়ে গেছি। তিনি বলেন, ‘মেয়েটা মানুষের বাড়িতে কাম-কাজ কইরা বাচ্চাদের পালছে। আমার মেয়েটা মারা গেলে এই তিনটি বাচ্চা নিয়ে আমি কই যামু, তাদেরকে কীভাবে পালুম। আপনাদের ওসিলায় আল্লাহ যদি আমার মেয়েকে রক্ষা করে। আমরা অসহায়, এখন তো আর কোনো পথ দেখতেছি না। দয়া করে কেউ এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ান।’

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সানজিদা আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, সারা পৃথিবীতে মহিলাদের যত ধরনের ক্যানসার আছে তার মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার প্রথম অর্থাৎ এটিই বেশি হয়। তবে এই ক্যানসারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নাই। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয় রিস্ক ফ্যাক্টর। এছাড়া পরিবারগত বা জেনেটিক কারণেও হতে পারে। তবে এর জন্য সচেতনতা প্রয়োজন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, এর জন্য বলা যায়- প্রতি মাসে একবার গোসলের সময় বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রেস্টের উপরে হাত বুলালে এর ভেতরে কোনো চাকার মতো অনুভব করলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

তিনি ক্যানসার আক্রান্ত রুমা আক্তারের পাশে দাঁড়াতে সমাজের সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অসহায় ও হতদরিদ্র রুমা আক্তার ও তার সন্তানদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে রহমত ও শিফা কামনা করেন।

[রুমা আক্তারকে কেউ সাহায্য পাঠাতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন- ০১৭৭২৭২৯৪৩৩ (বিকাশ)।]

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর