শান্ত ইসলাম একজন শিক্ষার্থী, যিনি জীবনযাপন করছিলেন একদম সাধারণভাবে। তবে, একদিন এসএসসি পরীক্ষার সময় তার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হয়।
আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করছিলেন শান্ত ইসলাম। তিনি স্কুলে পড়াশোনা করতেন। তবে, এসএসসি পরীক্ষার সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয়। অতিরিক্ত পানি পিপাসার কারণে পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে আঙুরসহ রসালো ফলমূল নিয়ে পরীক্ষা দেন তিনি। পরীক্ষা শেষে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিছু পরীক্ষা করার পর, রংপুর থেকে আরও পরীক্ষা করানো হয়। কিছুদিন চিকিৎসার পর রংপুরের বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরেও রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কয়েকজন ডাক্তার তার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এরপর, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তার পরিবার।
বিজ্ঞাপন
শান্তর অসুস্থতার অভিজ্ঞতা
শান্তর শারীরিক অসুস্থতা ছিল খাবারের চাহিদা কমে যাওয়া, কোমরের ব্যথা, মাথাব্যথা—এসব সাধারণ সমস্যা। তবে, এরপর দেখা যায় অতিরিক্ত পানি পিপাসা, যা তাকে আরও অসুস্থ করে তোলে। স্থানীয় চিকিৎসার পর রংপুরের বিভিন্ন ডাক্তারকে দেখানোর পর কিছুটা সুস্থ হলেও, কয়েক মাস পরই একই সমস্যা আবার দেখা দেয়। ২০১৪ সালের দিকে ঢাকায় গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পর, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার ওষুধ দেন, যা খেয়ে শান্ত অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, ২-৩ বছর পর আবার কোমরের ব্যথা বাড়ে এবং খাবারের চাহিদা কমে যায়। তখন সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলে, বিভিন্ন পরীক্ষা করার পরও কোন রোগের সন্ধান মেলে না। পরে চিকিৎসকরা জানান, তার চিকিৎসার জন্য থেরাপি প্রয়োজন। তবে, শান্ত থেরাপি নিতে রাজি হয়নি।
আরও পড়ুন—
ঢাকায় চিকিৎসা: সঠিক রোগ শনাক্ত হয়নি
ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি হতে অনেক কষ্ট হয় এবং দুই মাসের বেশি সময় কাটানোর পরেও সিট পাওয়া যায় না। একসময়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু সমস্যার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা মেলে না। পরে ডাক্তাররা কয়েকজন একযোগে পরামর্শ করে শান্তকে থেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু শান্ত সে পরামর্শে রাজি হয়নি। ডাক্তাররা তাকে জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং এখান থেকে সেবা না নিলে আর কোথাও চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। কিন্তু শান্ত তাদের পরামর্শে রাজি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
ভারতে চিকিৎসা: সঠিক চিকিৎসা ও সুস্থতা
ঢাকা থেকে ফিরে এসে, শান্ত ও তার পরিবার ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। পাসপোর্ট-ভিসা প্রস্তুত করে, তেতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানকার একটি হাসপাতালে সিটি স্ক্যান (এমআরআই) করার পর ডাক্তার শান্তকে জানিয়ে দেন যে তার সমস্যা ক্যানসার নয়, এটি একটি নির্দিষ্ট রোগ (আইজিজি ৪) এবং কিছুদিন চিকিৎসা করলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। ডাক্তাররা আরও পরীক্ষা করে জানান, এই রোগের চিকিৎসা করলেই সে সুস্থ হয়ে যাবে।
শান্তর মা রেখা বেগমের বক্তব্য
"আমার ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর প্রথম আমরা রংপুরে চিকিৎসা শুরু করি। দীর্ঘ সময় চিকিৎসা করানোর পরও কোনো ফল পাচ্ছিলাম না। অনেক পরীক্ষা করানোর পর ডাক্তাররা বলেছিলেন যে তার ক্যানসার হয়েছে, তবে এরপর তারা কোনও সমস্যার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এক পর্যায়ে আমরা ঢাকা নিয়ে যাই, তবে সেখানে গিয়ে আবারও থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা শান্ত রাজি হয়নি। পরে, আমরা ভারতে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে শান্তকে সুস্থ করে তুলেছি।"
আরও পড়ুন—
শান্তর বাবা মজিবুল ইসলামের বক্তব্য
‘শান্ত যখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন থেকেই তার অসুস্থতা শুরু হয়। পরীক্ষার সময় সে প্রচণ্ড পানি পিপাসায় ভুগছিল, তাই আঙুরসহ ফলমূল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছিল। চিকিৎসা করানোর পরও কোনো সঠিক ফল পাচ্ছিলাম না, এবং ডাক্তাররা বলেছিলেন ক্যানসার। তবে, ভারতে গিয়ে ডাক্তাররা বললেন যে তার সমস্যা ক্যানসার নয়, এবং চিকিৎসা করলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। চিকিৎসা নেওয়ার পরই তার খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং শরীরের অবস্থা অনেকটাই উন্নত হয়।’
প্রতিনিধি/একেবি