দেহের ওজন যখন প্রয়োজনের বেশি থাকে তখন তা নিয়ে চিন্তার শেষ থাকে না। হবে নাই বা কেন? উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে হার্টের সমস্যা, বাতের ব্যথা, কোমরের যন্ত্রণা—সবকিছু যেন ঐ এক সুতোতে বাঁধা। চিকিৎসকের কাছে যে সমস্যা নিয়েই যাবেন, তিনি পরামর্শ দেবেন বাড়তি ওজন কমানোর।
বাড়তি ওজন অসংখ্য শারীরিক সমস্যার কারণ। অনেকে জানতে চান এটি কি ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিরও কারণ হতে পারে? এই প্রতিবেদনের জানুন উত্তর-
বিজ্ঞাপন
ক্যানসারকে আলাদা কোনো রোগ বলা যায় না। বরং দেহের অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগের সমষ্টির নাম ক্যানসার। এখনো পর্যন্ত এর চিকিৎসার কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয় না। আর তাই ক্যানসারে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
পৃথিবীতে ২০০’র বেশি ধরনের ক্যানসার রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করছেন। এমনই এক গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোষের চারপাশে চর্বি জমার কারণে যে স্থূলতা দেখা দেয় তার ফলে দেখা দিতে পারে ক্যানসার। অর্থাৎ, সহজ ভাষায় বলা যায় অতিরিক্ত ওজন ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন কেন্দ্রিক ট্রিনিটি কলেজের একদল গবেষকের মতে, শরীরের এক ধরনের কোষ ক্যানসারের টিস্যুকে ধ্বংস করে থাকে। কিন্তু ক্যানসার প্রতিরোধী এই কোষের চারপাশে চর্বি জমে গেলে তারা আর কাজ করতে পারে না। ফলে বেড়ে যায় ক্যানসারের ঝুঁকি।
যুক্তরাজ্যের ক্যানসার গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ক্যানসার হয় ধূমপানের কারণে। এরপর বেশি ক্যানসার হয় স্থূলতার কারণে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে ২২ হাজার ৮০০টি ক্যানসারের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ গড়ে ২০ জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে অন্তত একজনের ক্যানসারের জন্য দায়ী অতিরিক্ত ওজন।
গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা দেখতে পেয়েছেন, এক ধরনের চর্বি ক্যানসার প্রতিরোধী কোষগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে এবং যে ধরনের কোষ ক্যানসারের জন্য দায়ী তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। ট্রিনিটি’র বিজ্ঞানীরা ন্যাচার ইমিউনোলোজি জার্নালে দেখিয়েছেন, চর্বি কীভাবে শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধী কোষগুলোকে ঢেকে রেখে নিষ্ক্রিয় করে রাখে। একইসঙ্গে তারা এমন ওষুধ আবিষ্কারের আশা করছেন যা চর্বির কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া কোষগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম হবে।
যুক্তরাজ্যের বিটসন ইনস্টিটিউটের ক্যানসার গবেষক ড. লিও কার্লিন বলেছেন, আগে থেকেই আমরা জানতে পেরেছি যে অন্তত ১৩ ধরনের ক্যানসারের জন্য অতিরিক্ত ওজন সরাসরি দায়ী। কিন্তু কীভাবে এটি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতো তা জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের। বর্তমানে সেটি অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, ক্যানসার চিকিত্সার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এই গবেষণার ফলাফল।
স্থূলতা এবং ধূমপানের কারণে যে চারটি ক্যানসার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে-
অন্ত্রের ক্যানসার- প্রায় ৪২ হাজার নতুন ক্যনসারের মধ্যে স্থূলতার কারণে হয় ৪,৮০০টি এবং ধূমপানের কারণে হয় ২৯০০টি।
কিডনি ক্যানসার- সর্বমোট ১২ হাজার ৯০০ ক্যানসার আক্রান্তের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে ২৯০০ জন এবং ধূমপানের কারণে ১৬০০ জন আক্রান্ত।
লিভার ক্যানসার- সর্বমোট ৫৯০০ জন লিভার ক্যানসারে আক্রান্তের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার জন্য ১৩০০ জন এবং ধূমপানের জন্য ১২০০ জন।
ওভারিয়ান ক্যানসার- মোট ৭,৫০০ জন ওভারিয়ান ক্যানসারে ভোগা নারীর মধ্যে ৪৯০ জনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন দায়ী। যেখানে ধূমপান দায়ী ২৫ জনের ক্ষেত্রে।
এনএম