দক্ষিণাঞ্চলের এক কোটি মানুষের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ক্যানসার চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল হলেও, বর্তমানে হাসপাতালটির ক্যানসার বিভাগ চলছে সংকটের মধ্যে। বিশেষ করে, যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটের কারণে এই বিভাগে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না, ফলে রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যন্ত্রপাতি সংকট: কোবাল্ট-৬০ মেশিন নষ্ট
শেবাচিম হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টেলিথেরাপি মেশিন, কোবাল্ট-৬০, নয় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ২০০৫ সালে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত এই মেশিনটি ২০১৫ সালে অচল হয়ে যায়, এরপর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ক্যানসার রোগীরা এই সেবা নিতে ঢাকায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
আগে শেবাচিম হাসপাতালে এই সেবা মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, কিন্তু এখন ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা নিতে ৪০ গুণ বেশি খরচ করতে হচ্ছে—যেটি সাধারণ মানুষের জন্য এক বড় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিথেরাপি ছাড়া ক্যানসারের চিকিৎসার সফলতার সম্ভাবনা কম থাকে, তাই রোগীরা এ সমস্যায় চরম বিপাকে পড়েছেন।
আরও পড়ুন—
বিজ্ঞাপন
জনবল সংকটের কারণে সেবা ব্যাহত
শেবাচিম হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগে বর্তমানে ২৭ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও কর্মকর্তা সংকটে ভুগছেন। বিভাগের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে—অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং মেডিকেল অফিসারের পদগুলো। এই কারণে, চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীরা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে কাজ করছেন।
এছাড়া, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, ও অন্যান্য সহায়ক কর্মীদের পদগুলোও শূন্য, যার ফলে রোগীদের সেবা প্রদান আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই সংকটের কারণে শেবাচিম হাসপাতাল তার ৩০ জন রোগীকে সঠিক সময়ে সেবা দিতে পারছে না, ফলে চিকিৎসার গুণগত মান কমছে এবং রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
রোগীদের বঞ্চনা ও দুর্ভোগ
মতাহার হোসেন নামে এক ক্যানসার রোগী বলেন, ‘শেবাচিম হাসপাতাল একটি ভালো হাসপাতাল ছিল, কিন্তু এখন সেখানে চিকিৎসা পাওয়া খুবই কঠিন। টেলিথেরাপি মেশিন নেই, ফলে আমাকে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, যার খরচ অত্যধিক।’
বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান জানান, ‘দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য শেবাচিম হাসপাতাল একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল, কিন্তু বর্তমানে যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটে রোগীরা সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
শেবাচিম হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আ.ন.ম. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকট সত্ত্বেও আমরা রোগীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি এবং জনবল থাকলে আমরা আরও দ্রুত ও কার্যকরীভাবে সেবা দিতে পারব।’
হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান জানান, ‘মন্ত্রণালয়ে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংকট সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা খান বলেন, ‘ক্যানসারের চিকিৎসা শুরুতেই করা হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তবে, যদি রোগী নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসা না পায়, তবে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।’
আরও পড়ুন—
সমাধান কী?
শেবাচিম হাসপাতালের রেডিওথেরাপিস্ট ডা. মো. মহসীন হাওলাদার বলেন, ‘লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন উন্নত দেশে ব্যবহৃত হলেও আমাদের এখানে এখনও কোবাল্ট-৬০ ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও, আমাদের কোবাল্ট মেশিন বসানোর জন্য কক্ষ প্রস্তুত রয়েছে, মেশিন সরবরাহ হলেই সেবা প্রদান সহজ হবে।’
দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
সচেতন মহল ও রোগীরা দ্রুত এই সংকটের সমাধান দাবি করেছেন। তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলের ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মেশিন সরবরাহ ও জনবল সংকট দূর করা উচিত। যাতে কোনো রোগী আর চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর মুখে না পড়েন।
প্রতিনিধি/একেবি