শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

ক্যানসার চিকিৎসা: জীবন বাঁচাতে নিঃস্ব হচ্ছে পরিবার

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্যানসার চিকিৎসা: জীবন বাঁচাতে নিঃস্ব হচ্ছে পরিবার
প্রতীকী ছবি

‘আমরা শুধু টাকায় ঢেলেছি, উনার ক্যানসারের কোনো উন্নতি হয়নি। যে কয়দিন হায়াত ছিল বেঁচেছেন। মনে হয়েছে, দেশে চিকিৎসা নিয়ে শুধু টাকা নষ্ট করেছি’— এভাবেই নিজের ক্যানসার আক্রান্ত ফুফুর চিকিৎসা ও আর্থিক খরচ ও শেষ পরিণতির বর্ণনা করছিলেন আরিফুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত নিঃসন্তান জোবায়দা খাতুনের চিকিৎসার পুরো সময়টা তার দেখভাল করেছেন আরিফ। রাজধানীর পাশের জেলার বাসিন্দা এই নারী প্রায় দুইবছর ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করে ২০২৪ সালের ঈদুল আযহার দিন মৃত্যুবরণ করেন। এ সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কেমোথেরাপিসহ চিকিৎসা বাবদ তার পরিবারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে শুধুমাত্র ক্যানসার শনাক্তেই খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এমনকি আর্থিক সংকটে ’২৪ সালের শুরু থেকে বন্ধ ছিল তার চিকিৎসা কার্যক্রম।

শুধুমাত্র এক জোবায়দা খাতুন নয়, দেশে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্যানসার রোগীদের গল্প প্রায় একই। আর দরিদ্র মানুষের জন্য তা পুরোটাই ভোগান্তি ও নির্মম বাস্তবতা। বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা রোগীদের জন্য শুধু শারীরিক যন্ত্রণা নয়; আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শঙ্কা বয়ে আনে। চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়ে অনেক পরিবার তাদের সঞ্চয় শেষ করে, ঋণের বোঝা বাড়ায় এবং সম্পত্তি বিক্রি করতেও বাধ্য হয়। এতকিছুর পরেও মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় অনেক রোগীর।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় গড়ে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ হয়। এই খরচ সর্বনিম্ন ৮১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ওষুধপত্রের জন্য। ক্যানসারের প্রথম স্তরে গড়ে চিকিৎসা খরচ প্রায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৪৩ টাকা, আর দ্বিতীয় স্তরে এই খরচ বেড়ে প্রায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৫ টাকায় পৌঁছায়। চিকিৎসার এই ব্যয় মেটাতে প্রায় ৭৮ শতাংশ পরিবারকে ঋণ করতে হয়। আর ৬৫ শতাংশ পরিবার নিয়মিত আয় থেকে খরচ বহন করে, ৫৬ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভাঙে এবং ৪০ শতাংশ পরিবার সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

চিকিৎসার উচ্চ খরচের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, সার্জারি এবং হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার খরচ। এছাড়াও ওষুধের দাম এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য একটি বড় আর্থিক চাপ। অন্যদিকে, সরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ খুবই সীমিত। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর উচ্চ খরচের কারণে অনেক পরিবার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা চিন্তা করে, যেখানে ব্যয় আরও বেশি।

শনাক্তকরণে দেরি ও জটিলতা

বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই উন্নত পর্যায়ে (স্টেজ-থ্রি বা স্টেজ-ফোর) ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যেমন: স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে, রোগীরা সাধারণত স্টেজ-থ্রি বা স্টেজ-ফোর পর্যায়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন। ফলে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে স্তন ক্যানসার রোগীদের সুস্থতার হার কম। অপরাপর ক্যানসারগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যেমনটা ঘটেছিল জোবায়দা খাতুনের ক্ষেত্রে। তার ক্যানসার শনাক্ত হয় স্টেজ-ফোরে।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে তার ভাতিজা আরিফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, শনাক্ত হওয়ার আগে ফুফুকে নিয়ে নিয়মিত চেকআপের জন্য গিয়েছিলাম। উনার আগে থেকেই বেশ কিছু সমস্যা ছিল। ঠান্ডাজনিত কারণে নরসিংদীতে একজন চিকিৎসকের অধীনে একাধিকবার উনার চেস্টের এক্স-রে করানো হয়েছে। কিছু ওষুধ সেবন করে সাময়িকভাবে তিনি কিছুটা সুস্থ থাকলেও বারবারই অসুস্থ হয়ে যেতেন। ২০২২ সালে আমরা উনাকে ঢাকায় পরীক্ষা ও চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেই। উনার সমস্যা বিবেচনায় আমরা উনাকে নিউরো রোগ, অর্থোপেডিক ও ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক দেখাই। মেডিসিনের চিকিৎসক শ্বাসজনিত সমস্যা থাকায় উনাকে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন। প্রাথমিকভাবে টিবি সন্দেহে পরীক্ষা করানো হলেও তা নেগেটিভ আসে। আর এক্স-রেতে ফুসফুসে কিছু একটা আছে বলে ধারণা করা হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা সিটি স্ক্যান করাই। এতে উনার ফুসফুসে একটা টিউমার শনাক্ত হয়। এ অবস্থায় উনাকে অনকোলজির চিকিৎসকের কাছে রেফার করা হয়। তিনি আরও বলেন, রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক বায়োপসি করানোর পরামর্শ দেন। মোট দু’টি বায়োপসি করা হয়। পাশাপাশি আমরা দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে ভারত থেকে রক্তের একটি পরীক্ষা করাই। এছাড়া বোন স্ক্যান করানো হয়। এই রিপোর্টগুলোর ফল আসতে প্রায় ২০-২৫ দিন সময় লাগে। নভেম্বরের ২০ তারিখ চতুর্থ স্টেজের ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হয়। একইসঙ্গে তা হাড়ে ছড়িয়ে গেছে বলেও জানা যায়। এই প্রক্রিয়ার আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. নাজিরুম মুবিন ঢাকা মেইলকে বলেন, এর কারণ অনেক গভীরে প্রোথিত। আমাদের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা অব্যবস্থাপনার একটা ফলাফল এই রোগীর ভোগান্তি। আমাদের এমবিবিএস বা বিডিএস মেডিকেল কারিকুলামে ক্যানসার সম্পর্কে পড়ানো হয় খুবই অল্প। এটা সংস্কার করতে হবে। আমরা যে বিভাগে ক্যানসার চিকিৎসা দেই; ১৯৫৪ সাল থেকে সে বিভাগের নাম রেডিওথেরাপি বিভাগ। রোগীরা তো দূরে থাক, চিকিৎসকরাই জানে না কোথায় গেলে রোগ শনাক্ত হবে; চিকিৎসা পাওয়া যাবে। এই নামেও সংস্কার প্রয়োজন। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো?

আরও পড়ুন: খাদ্যবাহিত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় সোয়া ৪ লাখ শিশুর মৃত্যু

শনাক্তকরণে দীর্ঘ সময় লাগা ও খরচ বেশি হওয়ার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে সমন্বিত ক্যানসার হাসপাতাল নেই বললেই চলে। একেক পরীক্ষার জন্য একেক জায়গায় যেতে হয়। একেক চিকিৎসার জন্য একেক দরজায় ধর্না দিতে হয়। রোগীরা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আমাদের সক্ষমতা আছে কিন্তু সমন্বয় নেই।

দীর্ঘমেয়াদি উচ্চমূল্যের চিকিৎসায় আর্থিক বিপর্যয়ে স্বজনরা

আরিফুল ইসলাম বলেন, ক্যানসার শনাক্তের পর চিকিৎসকের পরামর্শে আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু করি। প্রথম প্রটোকলে ২১ দিন পরপর তিনটা থেরাপি দেওয়া হয়। থেরাপির আগে ও পরে কিছু পরীক্ষা করা হয়। পরের পরীক্ষার মাধ্যমে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা তা নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, কোনো উন্নতি না হয়ে উল্টো তা বেড়েছে। এরপর অন্য মেডিসিনে আরও তিনটি থেরাপি দেওয়া হয়। এবার কিছুটা কমে। এতে সাইড এফেক্টও কম ছিল। এছাড়া বোনের জন্য আলাদা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এভাবে প্রায় ১৬ থেকে ১৭টা ও আগের মিলিয়ে ২০টা থেরাপি দেওয়া হয়। এতে আমার রোগীর অবস্থা কিছুটা উন্নতি বা স্থিতিশীল হয়েছিল; তবে আমরা আর্থিক সংকটে পরে যাই। কারণ এলাকা থেকে ঢাকায় এসে থেরাপি দেওয়া, থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় ৬০ থেকে ৬২ হাজার টাকা খরচ পড়তো।

চিকিৎসা বন্ধের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৩-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা থেরাপি দিয়েছি। এরপর আর্থিক সমস্যার কার‌ণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমরা কিছু অর্থ ব্যবস্থা করে চিকিৎসকের কাছে যাই। তখন পূর্বের থেরাপি দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অন্য মেডিসিনের থেরাপি দেওয়া হয়। এই প্রটোকলে উনার শরীর ধকল নিতে পারেনি। মুখে ঘা হয়ে যায়, তিনি কোনো কিছু খেতে পারতেন না। তখন আমার ফুফু শারীরিক কষ্টের কথা উল্লেখ করে থেরাপি নিতে আপত্তি জানান। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আমরা থেরাপি দেওয়া বন্ধ করে দেই। এরপর তিনি মোটামুটি ভালো ছিলেন। তবে মার্চ-এপ্রিলের দিকে উনার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। চিকিৎসক উনাকে পছন্দ অনুযায়ী খাবার-দাবার খাওয়ানো ও হাসিখুশি রাখতে বলেন। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের ১৭ জুন, কোরবানি ঈদের দিন সকালে উনি মৃত্যুবরণ করেন।

আর্থিক খরচ ও ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে এই রোগীর স্বজন বলেন, আমরা শুধু টাকাই ঢেলেছি, উনার ক্যানসারের কোনো উন্নতি হয়নি। যে কয়দিন হায়াত ছিল বেঁচেছেন। আমাদের দেশে এত ভালো চিকিৎসাও নাই। মনে হয়েছে, দেশে চিকিৎসা নিয়ে শুধু টাকা নষ্ট করেছি। আমরা প্রায় ১৬ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ক্যানসারের জার্নি ছিল। এর মধ্যে পুরো চিকিৎসা চলেছে আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল। আর পরীক্ষাগুলো ইবনে সিনা, আনোয়ার খান মর্ডান, এভারকেয়ার ও ভারতে একটি হাসপাতালে করা হয়েছে।

প্রক্রিয়াগত কারণেই ক্যানসার চিকিৎসা ব্যয়বহুল

ডা. নাজিরুম মুবিন বলেন, ক্যানসার চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী বেশ ব্যয়বহুল। এর কারণ বহুমাত্রিক। ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য রোগী যে ধাপগুলো অতিক্রম করে আসে তাতে একটা মোটা অংকের টাকা খরচ হয়। আবার চিকিৎসা শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ রোগীর একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হচ্ছে অর্থাৎ সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। অন্য কোনো রোগে একইসাথে এত চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয় না। আবার ক্যান্সার চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ফলে সময়ের সাথে সাথে খরচও বাড়তে থাকে। চিকিৎসাগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও অনেক বেশি। কখনো কখনো সেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়েও অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। উন্নত দেশেও ক্যানসার চিকিৎসার খরচ কাভার করে এমন মেডিকেল ইন্স্যুরেন্সের খরচও অনেক বেশি।

মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালের খরচ মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে থাকলেও সেখানে অপেক্ষমান সারি অনেক দীর্ঘ। ফলে অনেকের চিকিৎসাতে একটা বিরতি পরে। নিম্নবিত্তরা চিকিৎসাই বন্ধ করে দেন। কিন্তু ক্যানসার রোগের ধরণ হলো এই রোগ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। রক্ত ও লসিকা স্রোতে করে শরীরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বসতি গড়ে। সুতরাং চিকিৎসা বন্ধে রোগী মূলত ক্যানসারকেই সুযোগ করে দিচ্ছেন। নিরাময় তখন কষ্টসাধ্য এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে যায়।

ঢামেকের রেডিওথেরাপি ও অনকোলজি বিভাগের এই ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট বলেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে নিত্য নতুন ধারণা কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আমাদের দেশ এসব থেকে অনেক পিছিয়ে। আমাদের স্বাস্থ্য বীমাও নেই, দাতব্য কোনো কর্মসূচিও নেই। অন্তত এই দুটি ধারণার বাস্তবায়ন এই সমস্যার প্রকটতা কিছুটা হলেও কমাতে পারে। পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধে বেশি জোর দিতে হবে।

এমএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর