২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের দিন। সারাদেশ তখন বিজয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে। এর মধ্যেই সেদিন উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয় ছয়টি তরতাজা প্রাণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুমনের বাড়ির ভেতর আটকে রেখে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে মারা হয় ছয় শিক্ষার্থীকে। নৃশংস এই ঘটনায় এখনো দেশের মানুষের হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ।
সেদিন বিকেলে সারা দেশের মতো লালমনিরহাটেও উল্লাসে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। স্বৈরাচারের পতনে আনন্দে ভাসতে থাকে পুরো জেলা। বের হয় বিজয় মিছিল। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুমনের চার তলা সুরম্য প্রসাদে আগুন দেয় কে বা কারা। এই সুযোগে বাড়িটির তৃতীয় তলায় ওই ছয় তরুণকে আটকে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় ফ্যাসিস্টের দোসররা। আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছয় শিক্ষার্থী বিকেল থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। পরে সেই বাড়ি থেকে বের করা হয় তাদের পোড়া দেহ।
বিজ্ঞাপন
ওইদিন আগুনে পুড়ে শহীদ হন আল শাহ রিয়াদ। তিনি বিজয় মিছিলে যোগ দিতে বিকেল ৩টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রাত ঘনিয়ে এলে রিয়াদের মা ও আত্মীয় স্বজনরা খুঁজতে বের হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সংবাদ আসে, আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী ছয়জনের লাশ উদ্ধার করেছে। পরদিন ৬ আগস্ট লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গিয়ে শহীদের মামা ও চাচা আগুনে পুড়ে যাওয়া শহীদ আল শাহ রিয়াদের মুখের থুতনি ও গলার চেইন দেখে তাকে শনাক্ত করেন।

শহীদ রিয়াদের প্রতিবেশী বড় বোন মাহবুবা মনির বলেন, তার সাথে দেখা হলে হাসি মুখে কথা বলতো, সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করতো। দেশপ্রেমিক ও প্রতিবাদী মানসিকতার ছেলে ছিল শহীদ রিয়াদ। তার এই জঘন্য ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের শাস্তির দাবি করছি।
সেই ছয়জনের মধ্যে মো. জোবায়ের হেসেন ও মো. জাহিদুর রহমানও রয়েছেন। দুজনই ছিলেন নবম শ্রেণির ছাত্র। তারা দুজনও স্বৈরাচার পতনের বিজয় মিছিলে যুক্ত হন। সারারাত খোঁজাখুঁজির পরদিন সকালে তাদের পরিবার জানতে পারে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত ছয়জনের লাশের মধ্যে জোবায়ের ও জাহিদও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরেকজন মো. শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবণ। বিজয় আনন্দে শ্রাবণ বের হয়েছিলেন রাজপথে। আনন্দ করছিলেন বন্ধুদের সাথে। সেখান থেকে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে আটকে রাখে সেটা আজও রহস্যই রয়ে গেছে।
এমএইচএইচ/এফএ/জেবি

















































































