আজ ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হচ্ছে। ঠিক এক বছর আগে, এই দিনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছিল। যশোর শহরে ছিল বিজয়ের উল্লাস আর বিষাদের এক মিশ্র আবহ।
একদিকে ছিল শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আনন্দ, অন্যদিকে একদল দুষ্কৃতিকারীর হাতে আগুনে পুড়ে যায় হোটেল জাবের—যা সৃষ্টি করে এক মর্মান্তিক অধ্যায়।
বিজ্ঞাপন
৫ আগস্টের সেই সকাল থেকেই যশোরের রাজপথে নেমে আসেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্তচক্ষু, দলীয় সন্ত্রাসী এবং প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি রাজপথে অবস্থান নেন। শহরের বিভিন্ন সড়কে মিছিল শেষে তিনি সিভিল কোর্ট মোড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা আসার পর, বেলা তিনটায় বিজয় মিছিল সহকারে তিনি যান দড়াটানা ভৈরব চত্বরে। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে তিনি ভাষণ দেন বীর জনতার উদ্দেশ্যে। এরপর তিনি যশোর শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেতৃত্ব দেন। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ও উপাসনালয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
এদিকে যখন শহরজুড়ে বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক তখনই নেমে আসে বিষাদের কালো ছায়া। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, নিষিদ্ধ ঘোষিত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন চিত্রা মোড়ের হোটেল জাবের ইন্টারন্যাশনাল—একদল সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতিকারী ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ছাত্র-জনতা ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তা রক্ষা করতে ছুটে যান।
আরও পড়ুন—
বিজ্ঞাপন
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ২৩ জন তরুণ-যুবা। তারা হলেন—
আব্দুল আজিজ চাঁন (১৬), চাঁচড়া রায়পাড়া; সিফাত হোসেন (২২), শাখারিগাতী; সোহানুর রহমান শিহাব (২৬), কিসমত নোয়াপাড়া; হাফিজ উদ্দিন (৩০), আমতলা, বারান্দি মোল্লাপাড়া; রোকনুজ্জামান রাকিব (২২), বালিয়া ভেকুটিয়া; সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ (২৭), উপশহর ১৬/১ বি ব্লক; ফয়সাল হোসেন (২৫), পুরাতন কসবা রায়পাড়া; শাওয়ানাত মেহতাব প্রিয় (১৮), মুজিব সড়ক; মেহেদী হাসান (১৩), কৃষ্ণবাটি; সামিউর রহমান সাদ (১৭), পূর্ব বারান্দি মোল্লাপাড়া; রুহান ইসলাম (১৭), খড়কি কারবালা; তারেক রহমান (২৮), রূপদিয়া বলরামপুর; আলামিন বিশ্বাস (২০), সুজলপুর হঠাৎপাড়া; আবরার মাসমুন নীল (১০), ঘোপ নওয়াপাড়া রোড; ইউসুফ আলী (১৫), চাঁচড়া চোরমারা; মেহেদী হাসান আলিফ (১৫), রেলগেট তেতুলতলা; সাকিবুল হাসান মাহি (১৫), চাঁচড়া ডালমিল; আব্দুল্লাহ ইবনে শহীদ (২৬), ঘোপ নওয়াপাড়া; রাসেল রানা (২১), আমদাবাদ আলম নগর; সাকি (১৮), শংকরপুর; রিয়াদ শেখ (১৮), নিউ রামকৃষ্ণ রোড, রায়পাড়া; খালিদ হোসেন শান্ত (১৮), আরবিকে রোড, রায়পাড়া; আব্দুল্লাহ (২৪), বড় আঁচড়া, শার্শা।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মধ্যে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজয়ের আনন্দে মিষ্টিমুখ করতে দেখা যায়।
এরই মধ্যে, ৪ আগস্ট বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কাজী নাবিল আহমেদের নেতৃত্বাধীন মিছিল থেকে কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, আসবাবপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
প্রতিনিধি/একেবি

















































































