শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাঙালি ভয় পেয়ে কখনও পেছনে সরে আসে না: নওশাবা

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৮ এএম

শেয়ার করুন:

বাঙালি ভয় পেয়ে কখনও পেছনে সরে আসে না: নওশাবা

আজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই বিপ্লবে’র বর্ষপূর্তি। গেল বছরের এই দিনে পতন ঘটে স্বৈরাচারী সরকারের। বিজয় হয় ছাত্র-জনতার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। দাবি আদায়ে গলা চড়িয়েছিলেন। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন জুলাই বিপ্লবের এ যোদ্ধা।

আজ জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি। দিনটি ঘিয়ে আপনার অনুভূতি কী? 


বিজ্ঞাপন


অনুভূতি শুধু ৫ আগস্টে এসে হয় না। সেই জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। এখনও চলমান। মাঝে ভালো, খারাপ অনেক কিছুই হয়েছে। সাধারণ নাগরিক হিসেবে, শিল্পী হিসেবে,  সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে প্রতিক্রিয়া তো আছেই।  জুলাই অভ্যুত্থানের আসল কারণটা ছিল ঐক্য। সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে আশা, ভরসা এবং আস্থা নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। সে আশা ভরসার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমরা প্রচুর মানুষ হারিয়েছি। শিশুদের হারিয়েছি। সেই জায়গাগুলো প্রতিদিন মনে রাখা খুব জরুরি। আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে দ্রুত ভুলে যাই। এই প্রবণতার কারণে নতুন একটি বিষয় সামনে এলে আগের শোকটাও খুব সহজে কাটিয়ে ফেলি। শোককে শক্তিতে পরিণত করা উচিত। আমার কাছে এখনও মনে হয়, আমরা যদি কথা কম বলে কাজ বেশি করতাম তাহলে সেটা অনেক বেশি ভালো হয়। আমি একজন শিল্পী হিসেবে শিল্প-সংস্কৃতির জায়গা থেকে বলব।  সবার আগে নিজের সংস্কার করা উচিত। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করানো জরুরি। দেশের মানুষ অনেক আস্থা নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেই আস্থার জায়গাটা ফিরে পেতে হলে সবার আগে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। নিরাপত্তার উন্নয়ন করতে হবে। আজ পর্যন্ত আছিয়ার ঘটনার কোনো বিচার হলো না। এরপর অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে সেগুলোরও কোনো বিচার হয়নি। বিচার না পেয়ে নতুন ঘটনা নিয়ে আবারও মাঠে নামি। আগেরটা ভুলে যাই। ভুলে যাওয়া আমাদের রোগে পরিণত হচ্ছে। আমার মনে হয় সেটাকে কাঁটানো খুব জরুরি। বিচার ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা উচিত।

Quazi_Nawshaba_g

‎সরকার পরিবর্তন না হলে আপনার যেকোনো কিছু হতে পারত। এমন ভয় বা  আশঙ্কা ছিল? 

২০১৮ সালের পর থেকে আমার অন্যরকমের জার্নি আছে। বাকিদের কথা জানি না। তবে এটা বলতে পারি ৫-১০ জন সাধারণ মানুষের মতো আমারও আশঙ্কা ছিল। কিন্তু বাঙালি ভয় পেয়ে কখনও পেছনে সরে আসে না। আমাদের দেশের মানুষ আগে থেকেই যোদ্ধা। অভ্যুত্থান আমাদের রক্ত ও মাটিতে মিশে আছে। কৃষক আন্দোলন, ব্রিটিশ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ বলেন সব সময় আশঙ্কা ছিল। তবে সাধারণ মানুষ ভয় করেছে এটা আমার মনে হয় না। তাঁরা প্রাণের তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নেমেছিল। আমি তাঁদের অনেক কাছ থেকে দেখেছি। নীরব থেকে অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করেছি। কারও মধ্যেই ভয় ছিল না। 


বিজ্ঞাপন


‎এক বছরে প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ হয়েছে? 

‎আমি আশাবাদী মানুষ। আমার কাছে মনে হয় নিজের জায়গা থেকে নিজের কাজটুকু করতে পারা, ঐক্য রক্ষা জরুরি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যেন বৈষম বিরোধী থাকে। আমরা যেন বৈষম্যহীন একটা সমাজ পাই। সেটাই আশা করব। সবার কাছে এটাই অনুরোধ। যে বিচারগুলো এখনও হয়নি। সেই বিচারগুলো হওয়া খুব জরুরি। একটা প্রবাদ আছে ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’। এজন্য প্রতিরোধ করাটা খুব জরুরি। তখন দেশের মানুষ এমনিতেই স্বস্তি ফিরে পাবে এবং অস্থিরতা দূর হবে বলে আমি মনে করি। দেশের মানুষকে স্বাধীনভাবে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করতে দিতে হবে। 

জুলাই বিপ্লবের ‎বর্ষপূর্তিতে পরিকল্পনা?

‎গত এক মাস ধরে আমি থিয়েটার নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমার একটা ছোট দল আছে। সেটি নিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের জন্য কাজ করছি। আর্ট থেরাপির রোগীদের নিয়ে। যেহেতু তাঁরা একটা অবসাদের ভেতর দিয়ে গেছেন। এক ধরনের পোস্ট ট্রমাটিক সিনড্রোমের ভেতর দিয়ে গেছেন। চেষ্টা করেছি খুবই সীমিতভাবে ৫০ জনের মতো জুলাই যোদ্ধাকে একসাথে করার। তাঁদের নিয়ে ৮ আগস্ট ঢাকা শিল্পকলার মূল হলের মঞ্চে ‘আগুনি’ নাটকটি করব। আমার সকল ধ্যান, জ্ঞান, সময় নাটকের দিকে। এটাই শহীদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

Quazi_Nawshaba_f

‎একবছরে কতটুকু প্রত্যাশা পুরণ হয়েছে? 

‎আমার প্রত্যাশা ছিল না। আমার প্রত্যাশা এখনও আছে। আমি মনে করি দেশটা সবার। কারও একার না। প্রত্যাশা যদি পূরণ করতে হয় আমাকেও কাজ করতে হবে। আপনাকেও কাজ করতে হবে। আপনি যখন নিজের জায়গায় থেকে ভালো কাজ করবেন। তখন আপনার কাজে ভালো কিছু ইনপুট দিলেন। আমি যদি ভালো থিয়েটার করতে পারি তাঁর মানে হচ্ছে আমি আমার জায়গা থেকে ভালো কাজ করলাম। আসলে আমাদের একটা প্রবণতা হচ্ছে তুমি কাজ করোনি। আমি নিজে কী করলাম সেটা আমার কাছে অনেক বেশি জরুরি। অন্য কে কী করল সেটার বলাই যায়। কিন্তু আমি নিজে কিছু করলাম কিনা সেটা বেশি জরুরি। নিজে ভালো ভালো কাজ করতে চাই। শুধু মানুষের কথা ভাবতে চাই না। প্রাণ ও প্রকৃতির কথাও ভাবতে চাই। বনায়নের কথা ভাবতে চাই। পশু পাখির কথা ভাবতে চাই। জলবায়ুর কথা ভাবতে চাই। একজন শিল্পী হিসেবে এগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। সোচ্চার থাকতে চাই আর স্বাধীন থাকতে চাই।  

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন…

‎আস্থা ফিরে পেতে চাইলে প্রমাণ করতে হবে আপনি সবাইকে রক্ষা করতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষ খুবই সহজ সরল। এতো বেশি কিছু চাই না। যাঁরা রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে চাচ্ছেন, আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে যদি দেশের মানুষের আস্থা গ্রহণ করতে চান তাঁদেরকে নিরাপত্তা দিন। বিচারের নিশ্চয়তা দেন। সঠিক চিকিৎসা দেন। খেতে ও ঘুমাতে দেন।

আরআর/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর