ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি (ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র) তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত এই স্মরণসভা ৫ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। আয়োজনে রয়েছে স্মৃতিসঞ্চার, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং রাজনৈতিক আলোচনার এক সংহিত ভুবন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ভোরে টিএসসি থেকে গণভবন পর্যন্ত সাইকেল র্যালি করা হয়। এই র্যালি দিয়েই শুরু হয় তিন দিনের বিশেষ উদ্যোগ, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গণভবন‑৩৬: জুলাই এক্সপ্রেস’। সাইকেল র্যালিটি সামগ্রিক আয়োজনের প্রথম প্রতীকী চিহ্ন।
বিজ্ঞাপন
টিএসসি প্রাঙ্গণে প্রবেশ মুখে ঝোলানো হয়েছে নানা ব্যানার ও পোস্টার। ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকান্ডের ব্যঙ্গচিত্র দেখে স্পষ্ট হয় আন্দোলন ও অবরোধের প্রতিফলন। স্টেশনের কেন্দ্রে এক স্থানায়ণে তৈরি করা হয়েছে ‘প্রতীকী ফতেহ গণভবন’, যেখানে গণভবনের ধ্বংসস্তূপ তুলে ধরা হয়েছে।
‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেস’ নামে চালু করা হয়েছে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী। এতে ট্রেনের বিভিন্ন দুষ্টু কোণে শহিদদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে দেখানো হয়েছে কীভাবে ফ্যাসিস্ট শাসনের কর্তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছিল—তার নির্মম দৃশ্যগুলো।
অনুষ্ঠানজুড়ে ডকুমেন্টারির পাশাপাশি হচ্ছিল বিপ্লবী গান ও কবিতা পাঠ। শহীদ পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত গল্পগুলো শ্রোতারা অনুপ্রাণিত করছেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্ল্যানচেট বিতর্ক, মাইম এবং নাটকরূপে বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
সরেজমিনে অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, টিএসসির প্রবেশ মুখ থেকে শুরু হয়েছে জুলাইয়ের আন্দোলনের বিভিন্ন ব্যানার-পেস্টুন। ভেতরে ডুকে দেখা যায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও তাদের ছবি ব্যাঙ্গ করে বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনী। গণভবন এর আঙ্গিকে একটি প্রতীকী ফতেহ গণভবন যেখানে গণভবনের ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অভ্যুত্থানে শহীদদের জন্য করা হয়েছে ‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেস’ নামক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, যেখানে ট্রেনে বিভিন্ন শহীদের পরিচয় দেখানো হয় এবং কীভাবে বিভিন্ন সময় ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে তার নির্মম চিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি জরুরি প্রাথমিক সেবার জন্য দুটি মেডিক্যাল বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন মহানগর থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দলে দলে প্রবেশ করতেও দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা থেকে ছাত্রশিবিরের প্রোগ্রামে আসা মো. মুহিব্বুলাহ আল জিহাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের অনেক ছাত্র ভাই শহীদ হয়েছেন, অনেকে হাসপাতালের বেডে ভর্তি—সব মিলিয়ে দেশের একটা নাজুক অবস্থা। তারমধ্যে অনেকে এখন ক্রেডিট অর্জনের জন্য চেষ্টা করতেছে। এখন এই দেশটা বিভাজনের দিকে চলে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের নতুন করে উদ্ভব হতে যাচ্ছে, যেখানে অনেকে তাদেরকে সাহায্য করছে। তবে আমরা অবশ্যই তাদের ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দিব না। আমরা এটাও দেখেছি, অভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণ থাকলেও অনেকে সেটি অস্বীকার করতে চায়।
ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্যে রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই আয়োজন বিনোদনের কোনো মাধ্যম নয়। এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আমরা সবাইকে মেসেজ দিতে চাই, জুলাইয়ের চেতনা হারিয়ে যাবার নয়, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মনে রাখবে।
অভ্যুত্থানের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে আমরা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এভাবে বের হতাম, আমরা হয়তো আর বাসায় ফিরতে পারবো না। সেই জায়গা থেকে আজকে আমাদের এই অর্জন। তখন, শহীদ ভাইদের ত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা দিত, এগিয়ে যাওয়ার আশা জাগাতো। তবে এখন আমরা এখন শঙ্কিত, অনেকে এই নতুন বাংলাদেশে নব্য ফ্যাসিবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম, ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম এবং ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ।
বিইউ/এইউ

















































































