গত বছরের জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে তাড়াতে ছাত্রদের নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল দেশের মানুষ। দল-মত নির্বিশেষে সবাই রাজপথে নেমে আসে তখন। এতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টের পতন হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে কিছুটা ফাটল দেখা দেয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপি-জামায়াত দুই মেরুতে চলে যায়। আরেক মেরুতে কার্যক্রম চালাতে থাকে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররাও। তবে প্রায় আট মাস পর আজ যেন আবারও দল-মত নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এককাতারে চলে এসেছিলেন। তাদের এই ঐক্যবদ্ধতা নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের।
ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সকাল থেকেই মানুষের স্রোত নামে ঢাকায়। দুপুরের পর-পরই মঞ্চে উঠেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতারা। এককাতারে মিছিল করতে দেখা যায় বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা প্রায় সব দলের নেতাকে।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা ও প্রতিনিধিরা।
কর্মসূচিতে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমানর মঞ্জু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনসিসির পক্ষে হাসনাত আবদুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাগপার রাশেদ প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এক সারিতে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে দেখে খুশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষও। সাইফুল নামে একজন বলেন, 'আজকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমরা যেমন সবাই এক হয়েছি, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেও আমরা এক থাকব। এভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর কখনো ফ্যাসিস্টের আগমন ঘটবে না।'
মামুন নামে আরেকজন বলেন, 'আজকের এই ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ দেখে স্বৈরাচারের দোসরদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। তারা যেন আর মাঝেমধ্যে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে।'
আজকের কর্মসূচি বিকাল চারটায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হলেও তখনও সোহরাওয়ার্দীমুখী স্রোত ছিল প্রতিবাদী মানুষের। বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানীর মহাখালী, বিজয় সরনি, ফার্মগেটে দেখা যায়, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এক লেন দিয়ে মানুষ সমাবেশস্থর ছাড়ছে, আরেক লেন দিয়ে মানুষ তখনও শাহবাগ অভিমুখী। সবাই পায়ে হেঁটে স্লোগানে স্লোগানে এগিয়ে যাচ্ছে। এই মিছিলের যেন শুরু-শেষ নেই।
এর আগে বাদ ফজর থেকেই রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। মিছিলে অংশ নেওয়া অধিকাংশের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগানসম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের রমনা কালিমন্দির গেট, টিএসসি সংলগ্ন গেট, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট, ভিআইপি গেট দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই মিছিলসহ সমাবেশস্থলে আসছেন অংশগ্রহণকারীরা।
এ সময় ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘গাজা রক্তে রঞ্জিত, বিশ্ব কেন নীরব’, ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগান দিতে থাকেন কর্মসূচিতে আসা লোকজন।
টিএই/জেবি