পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন রাজধানীর শাহবাগ পরিণত হয় এক রঙিন উৎসবমুখর জনসমুদ্রে। নানা বয়সী মানুষ আসেন রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে, বাহারি পোশাকে সাজিয়ে তোলেন নিজেকে। তবে বিশেষ করে নজর কাড়ে শিশুদের উপস্থিতি—যাদের হাতে রঙিন খেলনা, মুখে হাসি আর চোখে আনন্দের ঝিলিক।
শাহবাগ মোড় থেকে শুরু করে চারপাশের সড়কজুড়ে দেখা যায় হরেক রকমের খেলনার পসরা। কাগজের পাখা, খেলা ঢাক-ঢোল, বাঁশির শব্দ, পাখির ডানা নড়াচড়া, বাবু-বেবির ছোট গাড়ি কিংবা মুখে পরে হাঁটলে হাওয়ায় নড়ানো মুখোশ—সবই শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিজ্ঞাপন
মতিঝিল থেকে আসা সাত বছরের সায়ানের হাতে ছিল একটি রঙিন কাগজের পাখা। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাবা সাহেদ বলেন, প্রতিবছরই ছেলেকে নিয়ে পয়লা বৈশাখে আসি। এবার শুরু থেকেই খেলনা খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওর কাছে এই তলোয়ারটাই যেন বড় সারপ্রাইজ।
একইভাবে মিরপুর থেকে আসা দশ বছরের রিনার হাতে ছিল একটি প্লাস্টিকের ফুলের ছাতা ও একটি খেলনার বাঁশি। রিনা খুশি হয়ে বলল, আমি আজকের শোভাযাত্রাও দেখেছি। এখন এই বাঁশি বাজাবো। আব্বু কিনে দিয়েছেন।
অভিভাবকরাও শিশুদের এই আনন্দে সামিল হতে পেরে খুশি। অনেকে বলছেন, শহরের কোলাহল আর পড়াশোনার চাপে শিশুদের স্বাভাবিক আনন্দ প্রায়ই হারিয়ে যায়। বৈশাখের এই দিন তাদের জন্য যেন নতুন রঙ নিয়ে আসে।
বিজ্ঞাপন
খেলনার দোকানিদের মুখেও হাসি। রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকান বসানো মিজান বলেন, আমি সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছি। শুধু বৈশাখের জন্যই বিশেষ খেলনা নিয়ে এসেছি। বাচ্চারা খুব আগ্রহ নিয়ে কিনছে। সকাল থেকেই বিক্রি ভালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিদিতা সরকার বলেন, বাচ্চাদের খেলনা কেনা শুধু বিনোদন নয়, এটি তাদের সাংস্কৃতিক উৎসবকে উপলব্ধি করারও একটি মাধ্যম। তাই এই আয়োজন আরও বড় পরিসরে হওয়া উচিত।
পয়লা বৈশাখ এখন কেবল বড়দের উৎসব নয়, শিশুদের জন্যও এটি এক অনন্য আনন্দঘন দিন। শাহবাগের খেলনার বাজার সে প্রমাণই দিল। দিনভর চলতে থাকে খেলনা বেছে নেওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর মুখরিত পরিবেশে হারিয়ে যাওয়ার গল্প। শহরের যান্ত্রিক জীবনে এই একটুকু ছুটিই যেন শিশুদের জন্য এক বিশুদ্ধ খুশির পরশ।
টিএই/এএস