সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন প্রতিবাদ আগে দেখেনি দেশবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন প্রতিবাদ আগে দেখেনি দেশবাসী
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের সম্মিলিন। ছবি: সংগৃহীত

দশকের পর দশক ধরে নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসী। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল এমন কোনো নিষ্ঠুরতা নেই যা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে করেনি। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবাদ হলেও ভ্রুক্ষেপ করেনি ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি। পশ্চিমাদের আস্কারা পেয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় দেড় বছর ধরে নিজেদের অসভ্যতা ও বর্বরতার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে দেশটি। হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করছে তারা। প্রতিদিনই শত শত লোককে মারছে।

অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার বাংলাদেশ। কোনো সরকারই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং দেশটির সঙ্গে আমাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। অপর দিকে বরাবরই ফিলিস্তিনিদের প্রতি এদেশের মানুষের হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা রয়েছে। গাজাবাসীর জন্য এদেশের মানুষের মন সবসময়ই কাঁদে। নানা সময় সেটার প্রকাশও ঘটিয়েছে দেশবাসী।


বিজ্ঞাপন


ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নানা সময় আন্দোলন হয়েছে এদেশে। তবে আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে যে কর্মসূচি পালিত হলো এর কোনো নজির নেই বাংলাদেশে। একসঙ্গে প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সব মত-পথ ও আদর্শের মানুষ এক মঞ্চে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে- এমন ঘটনা স্মরণ করতে পারছে না কেউই। এছাড়া এত বিপুলসংখ্যক মানুষ এভাবে একসঙ্গে প্রতিবাদও জানায়নি। এজন্য আজকের এই কর্মসূচিকে নজিরবিহীন বলছেন অনেকেই।

Gaza2

‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে যে ব্যানারে আজকের আয়োজনটি করা হয়, এটি সম্পূর্ণ নতুন ব্যানার। এর পেছনে বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিত্ব থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো নেতৃত্ব নেই। অথচ অখ্যাত এই সংগঠনের ডাকেই দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে। এর আগে গত ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে ডাক দেওয়া ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচিতেও দেশের মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছিল। তবে সেদিনের কর্মসূচি ছিল বিচ্ছিন্নভাবে। এছাড়া কথিত ইহুদি পণ্যের অভিযোগ তুলে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় সেই প্রতিবাদ অনেকটা বিতর্কিত হয়েছিল। তবে আজকের প্রোগ্রামে এ ব্যাপারে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন আয়োজকরা। এজন্য কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আজ সবার উপস্থিতি ছিল স্বতস্ফূর্ত এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সবাই ছিলেন সোচ্চার।

‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিকেল তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সবার। কিন্তু সকাল থেকেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বেলা যত বাড়তে থাকে ততই মানুষের স্রোতও ভারী হয়। দুপুর দুইটার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।


বিজ্ঞাপন


Gaza3

শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, আশপাশের পুরো এলাকা ছিল মানুষে ঠাসা। একসঙ্গে এত মানুষের সম্মিলন খুব কমই দেখেছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এমনকি কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দলে দলে লোকজন সোহরাওয়ার্দীতে আসতে থাকে।

আজকের বিশাল এই কর্মসূচির সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক ছিল, এখানে কাউকে বিশেষভাবে ফোকাস করা হয়নি। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ সব ইসলামি দল এবং সমমনা নেতারা কর্মসূচিতে যোগ দেন। তাদের অনেককে অতিথি হিসেবে মঞ্চে ডেকেও নেওয়া হয়। তবে কেউই বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। এজন্য বক্তব্যের বাগাড়ম্বরও শুনতে হয়নি উপস্থিত শ্রোতাদের।  

কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশিষ্ট দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহ এবং প্রখ্যাত ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী উপস্থিত লাখো জনতাকে শান্ত করতে কিছু আহ্বানমূলক কথা বলেন। এছাড়া আয়োজকদের কেউই বক্তব্য দেননি। অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। পরে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিকতা।  

FFF

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজাবাসীর পক্ষে অভূতপূর্ব এই গণজমায়েতকে অনেকে এদেশে ইসলামি শক্তির ঐক্যের বার্তা হিসেবেও দেখছেন। একসঙ্গে একই মঞ্চ এত বিপুলসংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এর আগে তেমন একটা দেখা যায়নি। পরস্পরের সঙ্গে যাদের নানা বিষয়ে বিরোধ রয়েছে তারাও গাজা ইস্যুতে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে স্লোগান দিয়েছেন। আগামী দিনে এই ঐক্য ধরে রাখলে এদেশে ইসলামি শক্তি বড় ফ্যাক্টর হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল ও সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া চার স্তরে বেশ কিছু দাবি নিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে আজকের এই ঘোষণাপত্র।

অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল ও সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এর পাশাপাশি এতে উঠে আসে সারা বিশ্বে মুসলিমদের ওপর আগ্রাসন ও ওআইসিসহ মুসলিম নেতাদের নির্লিপ্ততার কথা।

Gaza11

এছাড়াও ঘোষণাপত্রে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করা হয়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটি ফের ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। ইসরায়েল ও এর সমর্থকদের পণ্য বয়কটেরও আহ্বান জানানো হয়।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর