ফিলিস্তিন ভূমি মুসলমানদের কাছে খুবই প্রিয়। কেননা এই অঞ্চলে অনেক নবী রাসুলের আগমন হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাসকেন্দ্রিক বিশাল ভূমিকে পবিত্র ভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যাকে হাদিসের ভাষায় শাম বলা হয়। শামদেশ বলতে বোঝায় বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে প্রিয়নবীজির মেরাজ শুরু হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে ফিলিস্তিন মুসলমানদের ভালোবাসার জায়গা।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ইহুদিদের নির্যাতনের শিকার। মুসলমানদের রক্তে প্লাবিত হচ্ছে ফিলিস্তিন। এরপরও আশার বাণী হচ্ছে- হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের অধিকারে আসবে। ফিলিস্তিনকে কেন মুসলমানরা এত ভালোবাসে তার কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
১. ফিলিস্তিন নবীদের পূণ্যভূমি।
২. ইবরাহিম (আ.) সর্বপ্রথম ফিলিস্তিনে হিজরত করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রী সারার সাথে সেখানে বসবাস করেন।
৩. লুত (আ.)-এর কওমের ওপর পতিত গজব থেকে আল্লাহ তাআলা লুত (আ.)-কে রক্ষা করেন ফিলিস্তিনে।
৪. নবী ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.)-এর জন্ম এই ফিলিস্তিনে।
বিজ্ঞাপন
৫. নবী মুসা (আ.) মিসর থেকে বনি ইসরাইলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন পবিত্র এই ভূমিতে প্রবেশ করার জন্য। যদিও ইহুদিরা তাদের চিরকালীন কাপুরুষোচিত স্বভাবের কারণে প্রবেশ করতে পারেনি। মুসা (আ.) এই ভূমিকে পবিত্র ঘোষণা করেন, যা পবিত্র কোরআনেও বর্ণিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে নবীজির ৭ ভবিষ্যদ্বাণী
৬. নবী দাউদ (আ.) অত্যাচারী জালূতের কপালে পাথর ছুঁড়ে তখনকার মুমিনদেরকে ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করেন।
৭. নবী সুলাইমান (আ.) ফিলিস্তিনে বসেই জ্বিন ইনসানসহ পৃথিবীবাসির ওপর রাজত্ব করেন।
৮. সুলাইমান (আ.) ও পিঁপড়ের যে বিখ্যাত কাহিনি কোরআনে বর্ণিত আছে তা এই শহরেই ঘটেছিল। বর্তমান city of ashkelon এ অবস্থিত আন্ট ভ্যালি আছে واد النمل নামে।
৭. নবী জাকারিয়া (আ.) ফিলিস্তিনেই বাস করতেন এবং তার মিহরাব এই ফিলিস্তিনেই ছিল।
৮. এই বায়তুল মাকদিসেই মরিয়ম (আ.) বসবাস করতেন এবং অলৌকিক খাদ্যভাণ্ডার প্রাপ্ত হতেন।
৯. এই ফিলিস্তিনেই মরিয়ম (আ.) কোনো পুরুষ ব্যতীত একটি শিশু (ঈসা আ.) গর্ভে ধারণ করার মতো আশ্চর্যজনক ঘটনার জন্ম দেন।
১০. নবী ঈসা ও ইয়াহইয়া (আ.) এই ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে উঠেন।
১১. এই ফিলিস্তিনেই ঈসা (আ.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র হলে আল্লাহ তাআলা তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেন।
আরও পড়ুন: হাদিসের বর্ণনায় যে দলটি ফিলিস্তিন জয় করবে
১২. আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (স.) মেরাজের রাতে আকাশের জগতে রওনা হওয়ার আগে আল্লাহ তাআলা তাকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিসে মেহমান করেন।
১৩. বায়তুল মাকদিসের দক্ষিণদিকে কোথাও আল্লাহর রাসুল (স.) অন্য জগতের বাহন তাঁর বোরাককে বেঁধে রাখেন।
১৪. ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিসেই আমাদের রাসুল (স.) সকল নবী রাসুল নিয়ে নামাজের ইমামতি করেন।
১৫. মেরাজের রাতে নামাজ ফরজ হওয়ার পর মসজিদুল আকসাই ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। মুসলমানরা বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে আল্লাহর আদেশে কিবলা পরিবর্তন করে আল্লাহর সবশ্রেষ্ঠ ঘর কাবার দিকে ফেরানো হয়।
১৬. কেয়ামতের আগে ঈসা (আ.) ফিলিস্তিনের পবিত্র শহরেই আসমান থেকে নেমে আসবেন।
১৭. ঈসা (আ.) দাজ্জালকে ফিলিস্তিন শহরেই শহরের বাবে লুদের কাছে হত্যা করবেন।
১৮. রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান। পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা, তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়ার পাওয়া যায়।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন কি নবীজির ভবিষ্যদ্বাণীর দিকেই এগোচ্ছে?
১৯. দুনিয়াতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ পবিত্র শহর ফিলিস্তিনে অবস্থিত। মসজিদটি হলো মসজিদুল আকসা। বলা হয়ে থাকে আদম (আ.) মসজদটি নির্মাণ করেছেন। আবু জর গিফারি (রা.) একদিন নবীজিকে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর তিনি জানতে চাইলেন যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান।
২০. বুখারি শরিফে আছে পৃথিবীতে মাত্র তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। এক. মসজিদুল হারাম। দুই. মসজিদে নববী তিন.মসজিদুল আকসা।
২১. সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ তাআলা মসজিদুল আকসার পরিবেশকে বরকতময় বলেছেন।
২২. সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তাআলা এই ভূখন্ডের ব্যাপারে বলেন, ‘আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’
২৩. সুরা আরাফে আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনকে কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্য বলেছেন।
২৪. সুরা আম্বিয়ার আরেকটি আয়াতেও সুলাইমানের (আ.)-এর ঘটনায় আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনে কল্যাণ রেখেছেন বলে ঘোষণা দেন।
২৫. ফিলিস্তিনের আছে আরও অসংখ্য ইতিহাস, সাহাবি, তাবেয়িদের আমলের বিস্তারিত ইতিহাস, সালাহউদ্দীন আইয়ুবির ইতিহাস। এই ভূমির কল্যাণের ব্যাপারে আছে হাদিসও। এখানকার মানুষের ব্যাপারেও আছে হাদিস। এতসব ছাড়া ফিলিস্তিনের যে অধ্যায়টি আমাদের হৃদয়ের সাথে সংযুক্ত, সেটা হলো ফিলিস্তিন হচ্ছে— শহীদদের ভূমি।
হে আল্লাহ! হে পরওয়ারদিগার! ফিলিস্তিন, বায়তুল মোকাদ্দাস ও এতদসংশ্লিষ্ট পুরো পূণ্যময় ভূমি আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। ফিলিস্তিনের মাজলুমদের রক্ষা করুন। ইহুদিদের নির্যাতনের শিকার প্রত্যেক মুসলিমকে আপনার নিরাপত্তার চাঁদরে আবৃত করুন। মৃতদের শ্রেষ্ঠ শহীদদের তালিকাভূক্ত করুন। আমিন।