রোববার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে কবে?

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২২, ০৮:৫২ এএম

শেয়ার করুন:

বিএনপিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে কবে?
ফাইল ছবি

নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে এই শর্ত পূরণে অঙ্গীকার করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিবন্ধন নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রায় দুই বছর আগে শর্তের মেয়াদ শেষ হলেও কোনো দলই তা শতভাগ পূরণ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। দলটির প্রধান একজন নারী হলেও এখনও বিএনপিতে নারীদের কোটা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি।

২০১৬ সালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘নারীদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াবো। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এই সংখ্যা ৩৩ শতাংশে নিয়ে যাবো।’ দলীয়প্রধানের সেই প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। তবে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বিএনপির জেলা ও মহানগরের বর্তমান কমিটিতে নতুন করে আরও ১৫ শতাংশ নারী সদস্য যুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি।

২০১৬ সালের মার্চে কাউন্সিল করে বিএনপি। একই বছর বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯টি পদের মধ্যে আগস্ট মাসে ১৭ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। ১৭টি পদের মধ্যে নারী কোঠায় ছয়জনের স্থান পাওয়ার কথা থাকলেও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (পদাধিকারবলে) ছাড়া কোনো নারী স্থান পাননি। যদিও এর দুই বছর পরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমানকে যুক্ত করা হয়েছে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন ৩৫ জন। কমিটি ঘোষণার সময় দুইজন নারীকে রাখা হয়েছে। তারা হলেন- মিসেস রাবেয়া চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান। ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পরবর্তী সময়ে সেলিমা রহমানকে স্থায়ী কমিটিতে যুক্ত করা হয়। এখন ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারী সদস্য রয়েছেন মাত্র একজন। অর্থাৎ শতাংশের বিচারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারী রয়েছে তিন শতাংশের কম।

এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে নারী রয়েছেন মাত্র ছয়জন। এই পরিষদে নারীরা স্থান পেয়েছেন মাত্র ৮ শতাংশ।

অপর দিকে বিএনপি মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছাড়াও সাতটি যুগ্ম মহাসচিব পদ রয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই পদে কোনো নারী সদস্য স্থান পাননি।


বিজ্ঞাপন


বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে দুইজন নারীকে স্থান দেওয়া হয়েছে। বরিশাল এলাকার জন্য বিলকিছ জাহান শিরিন ও ফরিদপুর এলাকার জন্য শামা ওবায়েদ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানেও শতাংশের হারে নারী রয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ, যা আরপিও’র ৩৩ শতাংশ থেকে যথেষ্ট দূরে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদ পাঁচটি। এর একটিতেও নেই নারী সদস্য। অবশ্য সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাতটি পদের মধ্যে তিনটি পদে তিন জন নারী রয়েছেন। তারা হলেন— অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও বেবি নাজনীন।

এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর ৪৪টি পদের মধ্যে নারী রয়েছেন মাত্র তিনজন— মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূর এ আর সাফা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা ও স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা।

এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে সহসম্পাদক পদে এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে বেশ কয়েকজন নারী থাকলেও শতাংশ হারে তা তিন-চার শতাংশের বেশি না। শুধু নির্বাহী কমিটি নয়, বিভিন্ন সময় গঠিত সাময়িক (টেম্পোরারি) কমিটিতে একজন নারীকেও রাখা হয় না।

ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী স্থান পেয়েছেন মাত্র একজন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি মধ্যে দুজন নারীকে রাখা হয়েছে।

বিএনপির আন্দোলনের ‘ভ্যানগার্ড’ নামে খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই সংগঠনটির ৬০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী রয়েছে মাত্র দুইজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শতাংশের বিষয়টি অফিস বলতে পারবে। তারপরেও জানিয়ে রাখি আমাদের দলীয় প্রধান হচ্ছে নারী, এছাড়া আমাদের চেষ্টা চলছে যাতে ৩৩ শতাংশ পূর্ণ হয়। এখনও এই মাত্রায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি, তবে চেষ্টা চলমান রয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিএনপিতে বিভিন্ন কমিটিতে এখন ২০ থেকে ২৩ শতাংশ নারী রয়েছে। এছাড়া বিএনপির জেলা ও মহানগরের বর্তমান কমিটিতে নতুন করে আরও ১৫ শতাংশ নারী সদস্য যুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা চলছে, অতি দ্রুত ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করা হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারবো না, এটা অফিস বলতে পারবে। তবে এর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এখন যেসব কমিটি হচ্ছে সেখানে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে যে, তারা যেন এই সংখ্যা বাড়ায়। নতুন কমিটিতে চেষ্টা করা হচ্ছে বেশি রাখার। আরপিওতে লেখা রয়েছে এটা গুরুত্বপূর্ণ, তারপরও আমরা মনে করি নারী নেতৃত্বের নিকাশ দরকার। নারীদের অংশ, আগ্রহ বাড়ানোর দরকার। আমাদের তো নারী নেতৃত্ব এবং নারীদের সমর্থন অনেক বেশি।’  

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শতাংশটা বলতে পারবো না, যারা অফিস দায়িত্বে রয়েছে তারা এটা বলতে পারবে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য জেলা পর্যায়ে নির্দেশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে যখন নির্বাহী কমিটি হবে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করা হবে।’ 

এমই/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর