রোববার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সন্তানসম্ভবা বিথীর জীবনযুদ্ধ

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২২, ১০:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

সন্তানসম্ভবা বিথীর জীবনযুদ্ধ
বিথী রানী (২৮)

টিনের ছোট্ট ছাপড়া ঘর। তাতে সকাল থেকেই রান্না হচ্ছে চাসহ হরেক পদের খাবার। ক্রেতা আসছেন। অনেকে সকালের খাওয়া শেষ করে চলেও যাচ্ছেন। খাবার রান্নাসহ পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন এক নারী। তিনি বিথী রানী (২৮)। গল্পটা খুব সাদামাটা শোনালেও বাস্তবতা বড়ই নির্মম। কারণ বিথী রানী সন্তানসম্ভবা।

আজই (৮ মার্চ) তার বাচ্চা হওয়ার দিন নির্ধারিত আছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির পুরো টাকা এখনো জোগাড় হয়নি বিথীর। ফলে বাধ্য হয়েই টাকা সংগ্রহের জন্য প্রতিদিনের মতো আজও খুপড়ি হোটেলে রান্না শুরু করেছেন তিনি।

বিথী রানীর বাড়ি বগুড়া শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বেজোড়া দক্ষিণ পাড়ায়। তার স্বামী বিপুল সরকার একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা। স্বামীর পত্রিকা বিক্রির টাকায় সংসার চলে না। তাই সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে বিথী রানী নিজেই শহরতলীর বনানী বাস স্ট্যান্ড মহাসড়কের পার্শ্বে গড়ে তুলেছেন খাবার হোটেল। এখানে রান্নার জন্য সবজি কাটাকুটা থেকে শুরু করে রান্না, পরিবেশন, বাসন ধোয়া সব একা হাতে সামাল দেন বিথী রানী।

bithy

সোমবার (৮ মার্চ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় বিথী রানীর সঙ্গে। হোটেলে বসে নিজের জীবন কাহিনী বর্ননা করেন বিথী। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া অবস্থায় বিয়ে হয় তার। সংবাদপত্র বিক্রেতা স্বামী বিপুল সরকারের আর কোনও আয়ের উৎস নাই। বিপাশা নামের ৫ বছরের মেয়ে নিয়ে মোটামুটি চলছিল তাদের সংসার।

কিন্তু ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে ব্যবসায় ভাটা পড়ে বিপুল সরকারের। লোকসানের মুখে পড়ে সংবাদপত্র বিক্রির ব্যবসা। সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায় বিপুল সরকারের। বাধ্য হয়ে বিথী রানী খাবার হোটেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে হোটেল চালু করেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি হোটেলে কাজ করেন। কখনও চা বানান আবার কখনও ভাত তরকারি। একাই কাস্টমারকে খাবার পরিবেশনও করেন। তার স্বামী দিনে সংবাদপত্র বিক্রি করেন। এরপর সন্ধ্যা থেকে হোটেলে তাকে সহযোগিতা করেন। এরই মধ্যে তার গর্ভে আসে ২য় সন্তান। সন্তান গর্ভে নিয়েই চলে তার প্রতিদিনের কাজ। সম্প্রতি চিকিৎসক তাকে বিশ্রাম নিতে ও ভারী কাজ না করতে বলেছেন। কিন্তু ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই বিথীর। প্রতি সপ্তাহে এনজিও’র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। সেই সঙ্গে চিকিৎসা খরচ বহন করতে হোটেল চালু রাখার বিকল্প নাই তার।


বিজ্ঞাপন


bithy

আজ বিশ্ব নারী দিবস- এ বিষয়ে কিছু জানেন কি-না প্রসঙ্গে বিথী রানী বলেন, ‘নারী দিবস টিবস নিয়ে ‍কিছু জানি না। বুঝিও না। আমরা গরীব মানুষ। আমার স্বামী পত্রিকা বিক্রেতা। আমাদের গায়ে খেটেই সংসার চালানো লাগবে। বিপদে কেউ আমাদের সাহায্য করবে না। আমাদের আল্লাহ-ই ভরসা।’

বিথীর স্বামী বিপুল সরকার বলেন, ‘আমার কপাল খুব খারাপ। যে সময় স্ত্রীকে বিশ্রামে রাখার কথা, ভালো মন্দ খাওয়ানোর কথা। সেই সময়ও তাকে সংসারের হাল ধরতে কাজে আসতে হয়েছে। এই অসুস্থ অবস্থায় ভারী কাজ করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে তাকে আমি ডাক্তাকের কাছে নিতে পারছি না। ওর জন্য খুব কষ্ট হয়। আমার স্ত্রী বিথী জীবনযুদ্ধের এক সাহসী সৈনিক। তাকে স্যালুট।’

   

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর