শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নাকুগাঁও বন্দরের পাথর ভাঙার নারী শ্রমিকরা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২২, ১০:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নাকুগাঁও বন্দরের পাথর ভাঙার নারী শ্রমিকরা
ছবি : ঢাকা মেইল

সচেতনতার অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পাথর ভাঙার নারী শ্রমিকরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষার অভাবে ক্রাশিং মেশিনে পাথর ভাঙা, নেটিং ও উত্তোলন কাজের সঙ্গে জড়িত এসব শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছেই। এদিকে পাথর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাকুগাঁও স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় দেড় হাজারের মতো শ্রমিক। বেশিরভাগ নারী। এখানে কাজ করে জীবন নির্বাহকারী বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ শ্রমিক জানেন না তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কি করতে হবে। এমনকি সুরক্ষার বিষয়টিও ভাবছেন না তারা। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে, পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, শরীরে ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অনেকে।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হয় পাথর ভাঙা নারী শ্রমিক হুজুফা বানুর। তিনি বলেন, ‘ধুলা বালুতে সারাদিন থাকতেই অই। নাক মুখ দিয়ে ধুলা গেলে ঠাণ্ডা লাগে, মাথার বেদনা হয়। পরে বাজারে ডাক্তারের দোহান (দোকান) থেকে অসুধ (ওষুধ) খাই। কি করমু, পেট তো ধুলা মানে না।’

একই কথা জানালেন মিলাশী কোচ। তিনি বলেন, ‘আমরা সীমান্ত এলাকার মানুষ। আর কোনো কাম কাজ নাই। পাথর ভাঙা খুব কষ্টের কাম, সংসারে অভাব তাই করতেই অয় (হয়)।’

রশিদা বেগম বলেন, ‘আমগোর বেডা (স্বামী) বিছনাই পড়ছে। বাধ্য অইয়াই পাত্তর ভাঙি। যে ট্যাহা পাই, তা দিয়েই সংসার চালাই। ধুইল্লার (ধুলো) লাইজ্ঞা চোখ জ্বালাপোড়া করে, ঠাণ্ডা কমে না।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাথরের ডিপোর মালিক জানায়, ‘শুধু শ্রমিক কেন, আমরা নিজেরাও তো ঝুঁকির মধ্যে আছি। ধুলো বালি নাকের ভেতরে গেলে ঠাণ্ডা লাগে। এছাড়া আর বেশি কিছু হয় না।’ 


বিজ্ঞাপন


আদিবাসী নারী নেত্রী কেয়া নখরেখ ক্লোরিডা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকলেও সচেতন নেই। স্বাস্থ্য সমস্যায় স্থানীয় কেমিস্ট ও পল্লী চিকিৎসকের কাছে বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খেয়ে সাময়িক সুস্থ হয়ে আবারও পাথরের কাজে নেমে পড়েন।

মহিলা শ্রমিক লীগের জেলা আহ্বায়ক সাবিহা জামান শাপলা ঢাকা মেইলকে বলেন, ক্রাশিং মেশিনে পাথর ভাঙা, নেটিং, শোটিং ও উত্তোলন কাজের সঙ্গে জড়িত যারা, তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি মালিকপক্ষের উচিত শ্রমিকদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। মাসে অন্তত দুই থেকে তিনবার বন্দরে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা। আর যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব মালিকপক্ষকেই নিতে হবে।

জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা চেয়ারম্যান নাসরিন বেগম ফাতেমা বলেন, বিপুলসংখ্যক পাথর শ্রমিকের স্বাস্থ্য সচেতনতায় মাস্ক ব্যবহারসহ যাবতীয় পদক্ষেপ মালিকপক্ষ ও স্বাস্থ্য বিভাগকে যৌথভাবে পালন করতে হবে। তা না হলে এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক পাথর শ্রমিক সর্দি-হাঁচি-কাশিসহ অদূর ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য ঢাকা মেইলকে বলেন, যারা ক্রাশিং মেশিনে পাথর ভাঙার কাজ করেন তাদের শরীরে ডাস্ট শোষণযন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য আমরা মাস্ক পড়ে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর